যা দাবি করা হচ্ছে- যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদনের বরাতে বলা হচ্ছে, মহাখালির খাজা টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের কারণে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বিপর্যয় ঘটেছে।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে- যমুনা টিভির উক্ত প্রতিবেদনটি ৮ মাস আগের ভিন্ন একটি ঘটনার প্রতিবেদন, যার সাথে সাম্প্রতিক ঘটনার সম্পর্ক নেই।
ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। এসব পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, যারা বলেন নেটওয়ার্ক সরকার বন্ধ করে রেখেছে তাদের জন্য। মূল পোস্টে যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
আলোচ্য পোস্টগুলোতে সংযুক্ত যমুনা টিভির প্রতিবেদনে প্রতিবেদককে বলতে শোনা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলের আগুনে মহাখালির খাজা টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভবনটিতে থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ডেটা সার্ভার পুড়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি ইন্টারনেট সেবা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত ১৯শে জুলাই জানিয়েছিল, মহাখালিতে অবস্থিত মোবাইল ডাটা সেন্টার আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সারা দেশে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, যমুনা টিভির আলোচ্য প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এর উল্লেখ রয়েছে, অথচ বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী এই ঘটনা ঘটেছে ১৯শে জুলাই, যে দিনটি ছিল শুক্রবার।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে,প্রায় ৮ মাস পূর্বে, ২০২৩ সালের ২৬শে অক্টোবর তারিখে খাজা টাওয়ারে একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল ,যে দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এ সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কারণ ভবনটিতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) সার্ভিস প্রোভাইডার, ডাটা সেন্টার এবং ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) অপারেশন সেন্টার আছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এমদাদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কয়েকটি আইআইজি অপারেটর ওই ভবন থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেখান থেকে ব্যান্ডউইথ পায় ব্রডব্যান্ড ও টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ ঘটনায় কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ভিডিও প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া গেল। যেমন দেখুন এখানে,এখানে, এখানে।
যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও এ ঘটনার একাধিক প্রতিবেদন রয়েছে । সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সাথে পুরনো ভিডিওর সাদৃশ্য খুজতে গিয়ে দেখা গেল, যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭শে অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের মূল ক্লিপটি আপলোড করা হয়েছিল। এই ভিডিওর শিরোনাম ছিল পুড়ে গেছে ডেটা সার্ভার; কবে স্বাভাবিক হবে ইন্টারনেট সেবা? | Mohakhali Fire | Jamuna TV
২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের মূল ভিডিও থেকেই সম্পূর্ণ বা আংশিক ফুটেজ নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে দাবি করে ফেসবুকে আপলোড করা হচ্ছে।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে মহাখালির খাজা টাওয়ারের আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ৮ মাস পূর্বের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও এটি।
অন্যদিকে, বাদলকোট ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নামক পেজ থেকে ভিন্ন একটি ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে বলা হয়েছে,
যারা বলেন নেটওয়ার্ক সরকার বন্ধ করে রেখে তাদের জন্য,এই নিউজ।
সাধারণ ছাত্রদের ভিড়ে ঢুকে স্বাধীনতার অপশক্তিরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ডাটা কেবল অফিস খাজা টাওয়ার
এখানে, ডিবিসি নিউজ এর ৪ মিনিট ১২ সেকেন্ড এর একটি ক্লিপ যোগ করা হয়েছে। এই ক্লিপ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, এখানে সাংবাদিক আদিত্য আরাফাত এবং মোহাইমিনুল খান অপুর দু’টি পৃথক প্রতিবেদন রয়েছে। স্ক্রিনের সময় ও তারিখ থেকে জানা যাচ্ছে, শনিবার বিকাল ৩টা ১৫মিনিট থেকে ৩ টা ১৯ মিনিটের মাঝে এই প্রতিবেদন দুটি প্রচার করা হয়েছিল। প্রথম প্রতিবেদনে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সেতু ভবন এবং বিআরটিএ ভবনে হামলার খবরাখবর দেওয়া হয়েছে। মহাখালির খাজা টাওয়ার সম্পর্কিত কোনো তথ্য এই দু’টি প্রতিবেদনে নেই। এমনকি এই প্রতিবেদন দেখানোর সময়ে স্ক্রিনের নিচের অংশে যে সংবাদ শিরোনাম দেখানো হয় সেখানেও ‘খাজা টাওয়ার’ এর কোনো উল্লেখ ছিল না।
অর্থাত্,ক্যাপশনের সাথে এই ভিডিওতে দেখানো ডিবিসি নিউজের প্রতিবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সার্বিক বিবেচনায় এ সকল পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।