সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিতে যে দুজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তারা লাইলি-মজনু। তবে আলোচিত ছবিটির উৎস অনুসন্ধান করে জানা গেছে, লাইলি-মজনুর ছবি দাবিতে ভিন্ন দুজন মানুষের সংযুক্ত ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ওয়েবসাইট লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের মতে, উক্ত নারীটি জর্ডানের কেরাক শহরের বাসিন্দা ছিলেন, যিনি সম্ভবত একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন। তাছাড়া বিস্তর অনুসন্ধানে, উল্লেখযোগ্য কোন সূত্র থেকেই লাইলি-মজনুর কোনো ছবি পাওয়া যায় নি। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
ভাইরাল ছবিটির উৎস জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। লাইলি-মজনু দাবিতে প্রচারিত ছবিতে পাওয়া নারী ও পুরুষের ছবি দুইটি আলাদা করে সার্চ করে দেখা যায়, নারী ছবিটি উইকিমিডিয়া কমনসে সংরক্ষিত রয়েছে। ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত পর্বে বলা হয়েছে, একজন সাধারণ বেদুঈন নারীর ছবি। উল্লেখ্য যে, এই ছবিটিই লাইলি দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে। যদিও মূল ছবিটি কিছুটা পরিবর্তন করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। Alamy নামে আরেকটি স্টক ইমেজ সাইটেও ছবিটি পাওয়া যায়। অপরদিকে ওয়েবসাইট লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, উক্ত নারীটি জর্ডানের কেরাক শহরের বাসিন্ধা ছিলেন, যিনি সম্ভাবত একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিরও স্ত্রী ছিলেন। তবে মজনু দাবিতে যে ছবিটি ছড়িয়েছে রিভার্স ইমেজ সার্চে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।
প্রসঙ্গত যে, লাইলি-মজনু মূলত, ৭ম শতকে কায়েস ইবনে আল মুল্লাওয়া নামের একজন বেদুইন কবি ও তার প্রেমিকা লাইলি বিনতে মাহদীর প্রেমকাহিনীর উপর রচিত একটি মহাকাব্য। লাইলি-মজনুর প্রেমকথা বেদুইন জনপদে ৫ম শতাব্দী থেকে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় রূপকথা। পরবর্তীতে, নাজামি গাজনবী নামে এক পার্সিয়ান কবি উক্ত ভালোবাসার গল্পে মুগ্ধ হয়ে যার উপরে রচনা করেন মহাকাব্যটি। যা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়ে লাইলি-মজনুর প্রেম-কাহিনী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীজুড়ে।
বলাবাহুল্য, বহনযোগ্য ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছে ১৮ থেকে ১৯ শতকে। ধরা যাক মহাকাব্যের লাইলির বাস্তব অস্তিত্ব আছে তবে ৭ম শতকে এমন ছবি ধারণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া লাইলি-মজনুর কোনো ছবি আন্তর্জাতিক কোনো জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে ফ্যাক্টওয়াচ। সেখানে দেখা যাক, লাইলি-মজনুর বাস্তবিক কোনো ছবি ধারণ করা হয়নি, তবে কয়েকটি জাদুঘরে লাইলি-মজনুর নামে হাতে আঁকা কিছু চিত্র পাওয়া গেছে।
সুতরাং, দুজন নারী-পুরুষের যে ছবিকে লাইলি-মজনুর ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে তা ভিক্তিহীন।
সঙ্গত কারণে, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।