“আজানে শব্দ দূষণ হয়। এই অজুহাতে ভারতের উত্তর প্রদেশের সকল মসজিদ থেকে মাইক খুলে নেওয়া হচ্ছে।”—এমন দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । তবে ফ্যাক্ট-ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশে শুধু মসজিদ নয় , সকল ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে শব্দ দূষণ রোধে লাউডস্পিকার খুলে নেওয়া হয়েছে নতুবা লাউডস্পিকারের আওয়াজ কমাতে বলা হয়েছে।
কিন্তু আলচ্য গুজবে শুধু মসজিদের মাইক সরানোর আংশিক খবর প্রকাশ করা হয়েছে যা ধর্মীয় বিশৃংঙ্খলা তৈরি করতে পারে। তাই ফ্যাক্ট ওয়াচ খবরটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।
গুজবের উৎস
গত ২৮ই এপ্রিল Daily In নামক ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয় “আজানে শব্দদূষণ হয়। এই অজুহাতে ভারতের উত্তর প্রদেশের সকল মসজিদ থেকে মাইক খুলে নেওয়া হচ্ছে।” ভিডিওতে দেখা যায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে লাউড স্পিকার খুলে নেওয়া হচ্ছে।
Daily In -এর ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং বিভিন্ন পেজ এবং আইডি থেকে সেটা পোস্ট করা হয়। সেইসব পোস্টগুলোতেও মসজিদের মাইক খুলে নেওয়ার তথ্য প্রচার করা হয়। এমনই কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান
অনুসন্ধানে THE WALL -এর নিউজ থেকে জানা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সমস্ত উপাসনাস্থল থেকে বেআইনি মাইক সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। মন্দির, মসজিদ, গির্জা, সবক্ষেত্রেই এই নির্দেশ বলবৎ হবে।
এখানে বেআইনি মাইক বলতে যেগুলিতে সাউন্ড লিমিটর বা শব্দ মাত্রা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র লাগানো নেই। তাছাড়া একাধিক মাইক থাকলেও খুলে ফেলতে হবে। মাইকের মুখ থাকবে মন্দির-মসজিদের দিকে মুখ করা। যাতে আশপাশের মানুষের সমস্যা না হয়।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে যোগী আদিত্যনাথ যে গোরক্ষ মন্দিরের মহন্ত ছিলেন সেটার মাইকের মুখই রাস্তার দিক থেকে মন্দিরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে শব্দ দূষণ না হয়।
ZEE ২৪ ঘণ্টা এর সর্বশেষ নিউজ থেকে জানা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশে এখন পর্যন্ত ৪৫,৭৭৩ লাউডস্পিকার সরানো হয়েছে এবং ৫৮,৮৬১ লাউডস্পিকারের শব্দ কমানো হয়েছে। এর মধ্যে যেসব স্পিকারে শব্দের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, কোনও ভেদাভেদ ছাড়াই সব ধর্মীয় স্থান থেকে লাউডস্পিকার সরানো হচ্ছে।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন থেকে আরও জানা যাচ্ছে শুধু লাউড স্পিকার নয়, ধর্মীয় মিছিল বের করা নিয়েও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, “অনুমতি ছাড়া কোনও শোভাযাত্রা বের করা যাবে না। যদি মিছিল বের করতে হয়, তাহলে মিছিলের আয়োজকদের লিখিত ভাবে জানাতে হবে যে ওই মিছিলে শান্তি বজায় রাখা হবে।” উল্লেখ্য ভারতে মন্দির ও মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে তুমুল বিতর্কের পটভূমিতে যোগী আদিত্যনাথের এই সিদ্ধান্ত।
ভাইরাল হওয়া উক্ত নিউজটিতে উত্তর প্রদেশে শুধু মসজিদ থেকে মাইক নামানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে শুধু মসজিদ নয়, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই মাইক নামানো অথবা আওয়াজ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ভাইরাল হওয়া নিউজটিতে আংশিক তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তাই ফ্যাক্ট ওয়াচ এটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?