কোটা আন্দোলনে ম্যাজিক মাশরুম সরবরাহ – ভুয়া ফটোকার্ড

122
কোটা আন্দোলনে ম্যাজিক মাশরুম সরবরাহ – ভুয়া ফটোকার্ড
কোটা আন্দোলনে ম্যাজিক মাশরুম সরবরাহ – ভুয়া ফটোকার্ড

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে: সমকালের একটি ফটোকার্ডের বরাতে দাবি করা হচ্ছে  “কোটা আন্দোলনে ১৩শ কেজি ম্যাজিক মাশরুমসহ বিদেশী মাদকদব্য সরবরাহ, পিবিআই এর বর্ণনা”। 

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে:  সমকালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনামে কোন ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। তাছাড়া কোন স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যম থেকেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে  ১৩শ কেজি ম্যাজিক মাশরুমসহ বিদেশী মাদকদব্য সরবরাহের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ফটোকার্ডে দেখানো উদ্ধারকৃত ম্যাজিক মাশরুম এবং মদের বোতলের  ছবিটিও ২০২১ সালের ভিন্ন এক ঘটনার ছবি, যার সাথে সাথে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে শনাক্ত করছে।

গুজবের উৎস :

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

২৪ জুলাই, ২০২৪ তারিখে আগামীর বাংলাদেশ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে সমকালের একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা ছিলো “কোটা আন্দোলনে ১৩শ কেজি ম্যাজিক মাশরুমসহ বিদেশী মাদকদব্য সরবরাহ, পিবিআই এর বর্ণনা”। সমকাল থেকে ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ লেখা আছে ২৪ জুলাই, ২০২৪। আগামীর বাংলাদেশের উক্ত পোস্টের ক্যাপশনেও একই ফটোকার্ডটির শিরোনাম লেখা আছে এবং তথ্যসূত্র হিসেবে সমকালের নাম উল্লেখ আছে।

সমকালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ Samakal -এ অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে তারা সর্বশেষ ফটোকার্ড ফেসবুকে পোস্ট করেছে ১৮ই জুলাই । এই রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত ২৪শে জুলাই বা ২৫শে জুলাই তারা কোন ফটোকার্ড ফেসবুকে পোস্ট করেনি।

 

তাছাড়া কোটা আন্দোলনে ১৩শ কেজি ম্যাজিক মাশরুমসহ বিদেশী মাদকদব্য সরবরাহের খবর দেশের অন্য কোন স্বীকৃত গণমাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি।

 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটির  শিরোনামের মাদকদ্রব্য বানানটি মাদকদব্য লেখা। কোন স্বীকৃত গণমাধ্যম থেকে একরম সাধারণ বানান ভুল হওয়ার কথা না। এই ব্যাপারটি ফটোকার্ডটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে।

 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটির ডানপাশে ম্যাজিক মাশরুম এবং বিদেশী মদ প্রদর্শনের একটি ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। হবহু একই ছবি ৭ জুলাই, ২০২১ সালে যুগান্তরে প্রকাশিত একটি খবরে পাওয়া যাচ্ছে। খবরটির শিরোনাম ছিলো ‘হাতিরঝিলে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ মাদকসহ গ্রেফতার ২’। যুগান্তরের খবরটি থেকে জানা যাচ্ছে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামের মাদক ও দুই বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দুজন হলেন- নাগিব হাসান অর্নব (২৫) ও তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৪)।

৭ জুলাই, ২০২১ তারিখে ইত্তেফাক থেকে প্রকাশিত আরেকটি খবরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে তাইফুর রশিদ জাহিদ ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খবর পাওয়ার পর বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিতদের ম্যাজিক মাশরুম বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। কানাডায় অবস্থানরত তার বাল্যবন্ধু গ্রেফতারকৃত নাগিব হাসান অর্ণব অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাইফুর রশিদ জাহিনের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তাইফুর নাগিবকে আরো জানায় যে, সে ম্যাজিক মাশরুমের বারগুলো বাংলাদেশে বিক্রির ব্যবস্থা করবে।

ম্যাজিক মাশরুম সম্পর্কে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান “ম্যাজিক মাশরুম একটি সাইকেলেডিক (হ্যালোসিনোজেন) ড্রাগ। এই ড্রাগটি বিভিন্ন খাবারে যেমন: কেক ও চকলেট মিক্স অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়াও পাউডার ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারে সেবনকারীর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। তখন সে যেকোনো ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে। ইহা সেবনে শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগ যেমন সাইকোসিস ছাড়াও অবিরাম হ্যালোসিনেশনের কারণ হতে পারে।”

অর্থাৎ, এসকল খবর থেকে দেখা যাচ্ছে যে ম্যাজিক মাশরুমের এই চালানটি উদ্ধার করেছিল র‍্যাব, কিন্তু আলোচ্য ফটোকার্ডে দাবি করা হচ্ছে যে এটি পিবিআই (অর্থাৎ, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) উদ্ধার করেছে।

এছাড়া, বিবিসি বাংলার এই খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে .৭ই জুলাই ২০২১ তারিখের অভিযানে ম্যাজিক মাশরুমের ৫ টি বার উদ্ধার করা হয়, যার প্রতিটিতে ছিল ২৫০০ মিলিগ্রাম মাদক। অর্থাৎ মোট মাদকের পরিমাণ ছিল ২৫০০*৫=১২,৫০০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ ১২.৫ গ্রাম মাত্র । সেখানে ১৩০০ কেজি ম্যাজিক মাশরুম যেকোনো বিচারেই একটি অনেক বড় ঘটনা হওয়ার কথা, যা দেশী এবং বিদেশী গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। কিন্তু ফেসবুকের বাইরে অন্য কোনো গণমাধ্যমে মাদক দ্রব্যের এত বড় একটা চালান উদ্ধারের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের ওয়েবসাইট ঘেটেও এমন কোনো মাদক উদ্ধার অভিযানের খবর দেখা যাচ্ছে না।

সিধান্ত:

সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিযুক্ত ফটোকার্ডকে “মিথ্যা” হিসেবে শনাক্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

 

No Factcheck schema data available.