“খালেদা জিয়া এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা” – মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন এ কথা?

18
“খালেদা জিয়া এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা” – মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন এ কথা? “খালেদা জিয়া এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা” – মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন এ কথা?

Published on: [September 30,2021]

‘’খালেদা জিয়া এশিয়ার ম্যান্ডেলা, অচিরেই বিশ্বনেতা হবেন: বলেছেন মাহাথির মোহাম্মদ’’ – এমন একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে এই খবরটি দেখা যায়নি। মাহাথির মোহাম্মদ এর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফ্যাক্টওয়াচ দেখতে পেয়েছে, ২০১৮ সালে অনুরূপ খবর কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তখনো এই খবরটি গুজব হিসেবে সনাক্ত হয়েছিল।

বিভ্রান্তির উৎস

গত ২৭শে সেপ্টেম্বর থেকে এই খবরটি ফেসবুকের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় । এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে , এখানে , এখানে , এখানে


এসব পোস্টে বলা হয়েছে, বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, সাউথ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার যুগের পর যুগ নির্বাসন এবং কারাবন্দী করে রাখায় তিনি যেভাবে বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া কারাদণ্ডের কারণে তিনিও অচিরেই বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য মালয় মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ এসব কথা বলেন।

ভাইরাল পোস্টের অসঙ্গতিসমূহ

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত তারিখ থেকে জামিনে মুক্ত আছেন। কিন্তু ভাইরাল এই পোস্টে তাকে ‘কারাবন্দী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কয়েকটি পোস্টের শেষে তথ্যসূত্র হিসেবে শীর্ষ খবর ডট কম , মার্চ ১৪, ২০১৮ তারিখটি উল্লেখ রয়েছে।

এসব থেকে বোঝা যায়, এই ভাইরাল পোস্টটি বর্তমানের নয়, বরং ২০১৮ সালে ,যখন বেগম জিয়া কারাবন্দী ছিলেন, সেই সময়কার পোস্ট। ২ বছর পরে এই পোস্ট হঠাৎ করে ভাইরাল হয়েছে।

এছাড়া, এসব পোস্টে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কবে মালয় মেইলকে এই কথা বলেছেন, সেই তারিখ , কিংবা খবরের লিঙ্ক দেওয়া হয়নি।

অধিকাংশ পোস্টের সাথে যে ছবিটা দেওয়া হয়েছে, সেটি ২০০৩ সালের ছবি বলে অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে। ২০০৩সালে বেগম খালেদা জিয়া মালয়েশিয়ার পুত্রজায়াতে ও আই সি’র সম্মেলনে যোগ দিতে গেলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী সিথি হাসান বেগম জিয়াকে স্বাগত জানান।


২০১৮ সালের খবর

২০১৮ সালের ১৬ই মার্চ ৩ টি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ( সিলেট ২৪ , দি বার্তা , ওয়ান বিডি নিউজ ) এই খবরটি দেখা যায়। মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে এই খবরটি প্রকাশিত হয়নি।

ওয়ান বিডি নিউজ থেকে দীর্ঘ সংবাদটি উদ্ধৃত করছি ।

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, সাউথ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার যুগের পর যুগ নির্বাসন এবং কারাবন্দী করে রাখায় তিনি যেভাবে বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া কারাদণ্ডের কারণে তিনিও অচিরেই বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মালয় মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ এসব কথা বলেন।মাহাথির বলেন, ‘আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশি দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ কম। এখানকার সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী এখন কারাগারে

আছেন। এমনকি তিনি জামিন পর্যন্ত পাচ্ছেন না।তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ন্যায় নাকি অন্যায় তা বিবেকবান আদালতের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই।

তিনি বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকার নন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে একসময় তৎকালীন সরকার নির্বাসনে পাঠিয়েছে, কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী করে রেখেছে। কিন্তু এসবের কারণেই ম্যান্ডেলা বিশ্বনন্দিত নেতা হয়ে উঠেছেন, আর সেসব স্বৈরশাসকরা এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির এখনকার কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হলেও তাকে যখন স্বৈরশাসকরা যুগের পর যুগ গৃহবন্দী করে রেখেছেন, তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঠিক এভাবেই খালেদা জিয়া এখন পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক নেত্রী হয়ে উঠছেন।

আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিৎ দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। কিন্তু সেখানে এসব করার বদলে প্রতিপক্ষ দমনে মনোযোগ অনেক বেশি। আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে। কিন্তু তা তেমন একটা হচ্ছে না, বলেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই সফল প্রধানমন্ত্রী।

মাহাথির বলেন, ‘বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।

পশ্চিমাদের কূটচাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা।ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তবে মুসলিম দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা নিজেরাও মাঝে মাঝে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে। এই সুযোগে পশ্চিমারা কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দেয়,

সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালায়। এছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত। কিন্তু মুসলমান রাজনীতিবিদরা এসব না বুঝেই তাদের ফাঁদে পা দেয়। খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে বাংলাদেশ এখন সেই পুরনো ফাঁদে পা দিয়েছে।

প্রকাশিত এই সাক্ষাতকারের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের সাথে (হলুদ চিহ্নিত) মিল রয়েছে ২০১৬ সালে প্রকাশিত মাহাথির মোহাম্মদের অন্য একটি সাক্ষাতকারের সাথে। সেই সময়ে, দৈনিক মানবজমিন, প্রথম আলো ও কুয়েত টাইমসের হয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রধান ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া । দৈনিক ইনকিলাব  এবং মানবজমিন থেকে উক্ত সাক্ষাতকারটি পড়া যাবে । পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য উক্ত সাক্ষাতকারটিও উদ্ধৃত করা হল।

 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের মানুষ একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ ও কার্যকর নেতার কথা চিন্তা করলেই আপনার কথা বলে, আপনার নেতৃত্বগুণের কথা বলে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দেশের উন্নয়নেও এটি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? এ রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দেশটির উত্তরণের উপায় কী?

উত্তর: আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশী দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ কম। একই সময়ে, অবশ্যই, আপনি যদি রাজনীতি এবং দেশ কারা শাসন করছে, তা নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে অর্থনীতি ভুগবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। আমি মনে করি, আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। এ অবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

উত্তর: বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।

প্রশ্ন: মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই। আপনার কাছে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী মনে হয়?

উত্তর: আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যের সামপ্রতিক ইতিহাস দেখেন, তবে দেখবেন, যা আজ ঘটছে, তা হলো ৬০ বছর আগে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের ফল। ফিলিস্তিনিরা প্রচলিত কায়দায় লড়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরাইলিদের কাছে হেরেছে। কিন্তু এখন তাদের অন্য উপায়ে লড়তে হবে, যাকে ইসরাইল সন্ত্রাসবাদ বলছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করাটাও ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে। ইসরাইলিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছুই অর্জন হয়নি ফিলিস্তিনিদের। তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তারা এখন ক্ষুদ্ধ। এ সবই পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মধ্যে বিভক্তি এনেছে। অনেকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গণতান্ত্রিক হলেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু গণতন্ত্রের কার্যাবলী তারা বুঝতে পারে না। গণতন্ত্র এলে সরকার গঠিত হবে, নির্বাচন হবে, কিছু মানুষ সরকার বানাবে, কেউ বিরোধী দলে থাকবে। কিন্তু বিরোধীরা পরাজিত হতে চাইবে না, সবাই জিততে চাইবে। এসবের কারণে গণতন্ত্র এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আনেনি।

প্রশ্ন: আইএসর দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের দিকে পশ্চিমা নীতির ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

উত্তর: পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা। ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমি সাধারণ অর্থে মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার পেছনে পশ্চিমাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তারা নিজেরাই মাঝে মধ্যে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে, কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দিয়েছে, সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করেছে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালিয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা আপনি দেখছেন, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত।

দেখা যাচ্ছে, হলুদ চিহ্নিত অংশের কথোপকথনের সাথে কথিত ‘মালয় মেইল’ এর খবরের পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে। তবে ২০১৬ সালের এই সাক্ষাতকারের মাঝে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ নতুন ভাবে যোগ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী তারিখে দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া কারারুদ্ধ হন। কাজেই , ২০১৬ সালে (যখন বেগম জিয়া কারাবন্দী হন নি) মাহাথির মোহাম্মদের পক্ষে কারাবন্দী বেগম জিয়ার প্রসঙ্গে কথা বলা একেবারেই অসম্ভব।

শীর্ষ খবরের খোজে

ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টে খবরটার মূল উৎস হিসেবে ‘শীর্ষ খবর’ এর কথা বলা হয়েছে। সাম হোয়ার ইন ব্লগ এর ২০১৮ সালে ফকির আব্দুল মালেক এর  এই ব্লগ থেকে শীর্ষ খবর এর মূল ইউ আর এল পাওয়া গেল। ( https://www.sheershakhobor.com/special-column/2018/03/14/খালেদা-জিয়া-এশিয়ার-ম্যান) তবে উক্ত লিংকটি এখন সক্রিয় নেই। শীর্ষ খবর ওয়েব সাইট টি ই এখন নিষ্ক্রিয়।

সামহোয়ার ইন ব্লগের এই নিবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে , ‘’খালেদা জিয়াকে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে তুলনা করা’র এই সংবাদটি পরবর্তীতে ফেক নিউজ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।


বাংলাদেশী ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা বিডিফ্যাক্টচেক এর ২০১৯ সালের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকেও জানা যাচ্ছে, মাহাথির বলেছেন খালেদা জিয়া ‘এশিয়ার ম্যান্ডেলা-শীর্ষক খবরটিকে তারা ‘মিথ্যা’ হিসেবে সনাক্ত করেছিলেন । তবে তাদের প্রতিবেদনের ইউ আর এল টি ( https://bdfactcheck.com/factcheck/51) এখন সক্রিয় পাওয়া গেল না।


মালয় মেইল এ অনুসন্ধান

মালয়েশিয়ার একটি ইংরেজিভাষী সংবাদমাধ্যম হল মালয় মেইল। এই ওয়েবসাইটের সার্চ অপশন ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কিত ২০ টি খবর পাওয়া গেল। এগুলো কোনোটাই নেলসন ম্যান্ডালার সাথে তুলনা করা কোনো খবর নয়।

এছাড়া, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যখন উক্ত খবর প্রকাশিত হয়েছিল (১৬ই মার্চ ২০১৮) তার কাছাকাছি সময়ে মালয় মেইলে খালেদা জিয়া সংক্রান্ত কোনো খবরই প্রকাশিত হয়নি।

এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা কে ?

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারী নেলসন ম্যান্ডেলা কারাভোগ করেছিলেন দীর্ঘ বছর ২৭ বছর (১৯৬২-১৯৯০)।


অন্যদিকে , মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু কি ( Aung San Suu Kyi)  বিভিন্ন সময়ে গৃহবন্দী ছিলেন প্রায় বছর ১৫ বছর (১৯৮৯-২০১০)। এ কারণে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম অং সান সু কি কে ‘এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা’ কিংবা ‘মায়ানমারের নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসেবে অভিহিত করত।


তবে ২০১৭ সাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপরে অং সান সু কি’র সমর্থন নিয়ে সংঘটিত হওয়া  জাতিগত নির্মূল অভিযানের পরে সংবাদমাধ্যম সেই অবস্থান থেকে সরে আসে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

‘’খালেদা জিয়া এশিয়ার ম্যান্ডেলা, অচিরেই বিশ্বনেতা হবেন: বলেছেন মাহাথির মোহাম্মদ’’—এমন খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেলসন ম্যান্ডেলা খালেদা জিয়াকে নিয়ে এমন কথা কখনো বলেন নি। মাহাথির মোহাম্মদ এর অন্য একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া সংক্রান্ত কিছু মনগড়া কথা যোগ করে ২০১৮ সালে এই গুজবটা তৈরি করা হয়েছিল। এই পুরনো গুজবই সাম্প্রতিককালে আবার ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ এই সংক্রান্ত সকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে। 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.