হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নাম ও ছবি ব্যবহার করে প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা একটি ফটোকার্ডে ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মাওলানা মামুনুল হক সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে এমন কোনো বক্তব্য দেননি এবং প্রথম আলো কিংবা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁর বরাতে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
এসব পোস্টে, প্রথম আলোর আদলে তৈরি করা ফটোকার্ডে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এর উদ্ধৃতি হিসেবে বলা হয়েছে, আমি কখনোই আলকাতরা লাগানোর কথা বলিনি, তবে এটি স্পষ্ট যে একটি মুসলিম রাষ্ট্রে হিন্দুদের এই ধরনের পোষাক অগ্রহণযোগ্য। আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিগগিরই আমরা হিজাব বাধ্যতামূলক করবো।এখানে শুধুমাত্র ইসলামের আদর্শই টিকে থাকবে,এবং অন্য ধর্মের কোনো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বরদাস্ত করা হবেনা।
অনুসন্ধান
ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডে দৈনিক প্রথম আলোর লোগো এবং ‘মতামত.৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪’ এই কথাটি লেখা রয়েছে। প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুকে পেজে গিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে এমন কোনো ফটোকার্ড দেখা গেলনা।
এছাড়া, দৈনিক প্রথম আলোতে ২৬,২৮ এবং ২৯শে সেপ্টেম্বর তারিখে মামুনুল হকের চারটি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য প্রকাশিত হলেও ৩০শে সেপ্টেম্বর তারিখে তাঁর কোনো বক্তব্য নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
তবে ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রথম আলোর ‘মতামত’ বিভাগে সাবেক এসবি প্রধান ও পুলিশ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ বাহারুল আলম এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল-পুলিশকে কেন আমরা চাইনিজ রাইফেল দিলাম। এই সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে এদিন প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সর্বমোট ৪ টি কার্ড আপলোড করা হয়েছিল। এই ৪ টি কার্ডের মধ্যে ৩ টি কার্ডে জনাব বাহারুল আলমের পূর্ণ ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। একটি মাত্র কার্ডে তাঁর ছবিটির মাঝের অংশ আকাবাকাভাবে ক্রপ করে বাকি অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। ক্রপ করা এই অংশটি মানচিত্রের মত একটি সুদৃশ্য বক্ররেখা তৈরি করেছে।
মামুনুল হককে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আলোচ্য ফটোকার্ডেও দেখা যাচ্ছে, এখানে জনাব মামুনুল হকের ছবিটি হুবহু একই স্টাইলে ক্রপ করে মানচিত্রের মত একটি বক্ররেখা তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম আলোর বাহারুল আলমকে নিয়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডটাই এডিট করে মামুনুল হকের নামে এই কার্ড তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তদুপরি, ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৪ মিনিটে প্রথম আলোর ভেরিফাইড পেজ থেকে অন্য এক পোস্টে মামুনুল হক বিষয়ক ফটোকার্ডের ব্যাপারে জানানো হয়েছে,প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই ছবি ও তথ্য নকল।
সঙ্গত কারণে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভুল উদ্ধৃতিযুক্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করছে ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন পূর্বে যমুনা টিভির আরেকটি নকল ফটোকার্ড ভাইরাল হয়েছিল যেখানে মামুনুল হককে অশালীন কাপড় পরে নারীরা রাস্তায় বের হলে শরীরের উন্মুক্ত স্থানে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়ার আহবান জানাতে দেখা গিয়েছিল। এই ফটোকার্ডটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছিল। উক্ত গুজব বিষয়ে আমাদের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh