সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু পোস্টে ধর্ম উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে – ''স্কুল-কলেজে কুরআন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।'' আবার কিছু পোস্টে উপদেষ্টা আসিফকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে – ''মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল-কলেজে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।'' ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ম উপদেষ্টার নামে পোস্টটির সঙ্গে যে ছবিটি আছে, সেটি ইসলামি ফাউন্ডেশনের একটি বইমেলার। ছবির সঙ্গে যুক্ত খবরে আছে, ধর্ম উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে প্রাচ্যবাদ সম্পর্কে চর্চার অভাব রয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ বলতে আসিফ নজরুল নাকি আসিফ মাহমুদ তা উল্লেখ করা হয়নি। এই দুই উপদেষ্টার কেউ এ ধরনের কোন বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে মূলধারার কোন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেনি। তাদের ফেসবুক পেজেও এ ধরনের কোন কথা উল্লেখ্য নেই। কাজেই, ফ্যাক্টওয়াচ দুই ধরনের বক্তব্য সম্বলিত পোস্টকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে যে ছবি আছে, সেই ছবিতে রিভার্স ইমেজ চার্চ দিয়ে এই খবরের লিংক পাওয়া যায়। গত ১৬ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার কর্তক প্রকাশিত ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন রচিত ‘ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রাচ্যবিদদের সব কিছু যেমন মন্দ নয়, তদ্রুপ অন্ধভাবে প্রাচ্যবিদদের গ্রহণও করা যাবে না। তাদের চিন্তা-চেতনা যাচাই করে গ্রহণ করতে হবে। অন্যান্য দেশে এ বিষয়ে যেমন গণসচেতনতা রয়েছে আমাদের দেশে প্রাচ্যবাদ সম্পর্কে চর্চার অভাব রয়েছে।
এ বছরের আগস্টে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্কুল কলেজের পাঠ্যসূচী পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে অনেক সংযোজন ও বিয়োজন হবে। নতুন সিলেবাস নিয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে এ ধরনের ভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
কালবেলার এই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ধর্ম উপদেষ্টা বলেছেন, কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুর্নীতি মুক্ত দেশ গঠন সম্ভব। গত ৪ নভেম্বর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃতি হাফেজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তবে, স্কুল কলেজে কোরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নি উপদেষ্টা।
৭ ডিসেম্বরের সমকালের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার সব স্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ। পুরানা পল্টনের আজাদ সেন্টারে ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে এসব দাবি জানানো হয়।
সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, স্কুল কলেজে কোরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সমাজের নানা স্তরে আলাপ-আলোচনা চললেও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত আকারে এ ধরনের কোন বক্তব্য আসে নি।
ফলে ফেসবুকে ছড়িয়ে-পড়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা হল।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh