সম্প্রতি ভারতের মণিপুরে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি সামরিক হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে, যার আঘাতে হেলিকপ্টারটি ভূপতিত হয়ে যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে এটা সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত মণিপুরের স্বাধীনতাকামীদের দ্বারা ভারতীয় সামরিক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার ভিডিও। কিন্তু বাস্তবে এটা মিয়ানমারে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) দ্বারা মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দৃশ্য। এর সাথে ভারতের মণিপুরে চলমান আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোষ্টগুলো মিথ্যা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির উৎস সম্পর্কে জানার জন্য শুরুতেই এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। অনুসন্ধানে পিপলস স্প্রিং নামের একটি একটি বার্মিজ (মিয়ানমার) ভাষার সংবাদ মাধ্যমের ফেসবুজ পেজ সামনে আসে। সেখানে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ প্রকাশিত ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। বলা হয় মিয়ানমারের কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) দ্বারা দেশটির একটি সামরিক হেলিকপ্টারকে গুলি করে ভূপাতিত করার সময়কার ভিডিও এটি। উল্লেখ্য, কেআইএ (কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি) হচ্ছে মিয়ানমারের একটি অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে মিয়ানমার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম তাচিলেক নিউজ এজেন্সির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও এই একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, এই ভিডিওটি চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের মিটকিনা জেলার ওয়াইমাও টাউনশিপ থেকে ধারণ করা হয়েছিল। সেখানকার একজন কেআইএ সৈন্য অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল দিয়ে দেশটির একটি সামরিক কাউন্সিলের হেলিকপ্টারে আক্রমণ করে। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। কেআইএ এর একটি সামরিক সূত্র তাচিলেক নিউজ এজেন্সিকে নিশ্চিত করেছে যে, ভিডিওটি মিয়ানমারের লাইজা অঞ্চলের সামরিক ক্যাম্পে খাবার সরবরাহকারী একটি সামরিক হেলিকপ্টারকে কেআইএ দ্বারা গুলি করার সময়কার। মিয়ানমার নাউ নিউজ এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও এই একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যার বর্ণনায় একই তথ্য উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে, ভারতের মণিপুরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে নির্ভরযোগ্য কোনো খবর পাওয়া যায় নি। আবার, ভারত সরকারের পিআইবি ফ্যাক্ট চেক এবং মণিপুর রাজ্য পুলিশও স্পষ্ট করেছে যে ভিডিওটি আসলে মিয়ানমারের, মণিপুরের নয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোষ্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh