সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা একটি গাঁজার খামারের ছবি। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাইরাল এই ছবিটি এডিট করা। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, মেহেরপুরে বড় একটি গাঁজার বাগানের সন্ধান পেয়ে পুলিশ তা ধ্বংস করে। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। পুলিশের উদ্ধার অভিযানের সেই ছবিটি বর্তমানে ফেসবুকে উক্ত দাবিতে ভাইরাল হয়েছে। তবে উদ্ধার অভিযানের আসল ছবিটিকে প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করা হয়েছে।
ভাইরাল ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, কোনো একটি বাগানের মাঝে পোশাক পরিহিত একজন পুলিশ সদস্য ও দুইজন বৃদ্ধ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সামনেই বড় একটি সাইনবোর্ড। যেখানে লেখা আছে- “বঙ্গবন্ধু গাঁজা খামার। এখানে আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য বৈধ গাঁজা চাষ করা হয়”।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির সত্যতা জানতে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে বণিক বার্তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ৩০ জুলাই বণিক বার্তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটিতে যেই ফিচার ইমেজ ব্যবহার করা হয়েছে তার সাথে ভাইরাল ছবিটির মিল পাওয়া যায়।
ফিচার ইমেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, দুজন ব্যক্তির মাঝে পোশাক পরিহিত একজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। আরও কিছু পুলিশ সদস্য তাদের সামনে আছেন। ছবিটিতে এটিও দেখা যাচ্ছে, ক্যামেরা নিয়ে কোনো একজন ব্যক্তি ঘটনাটির ছবি বা ভিডিও করছেন।
বণিক বার্তা থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির মূল বিষয়বস্তু হলো, “মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া গ্রামে একটি গাঁজা বাগান ধ্বংস করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম বাগানটির দুই শতাধিক গাঁজা গাছ কেটে ফেলে। এসময় গাঁজা চাষী দুলাল পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে”।
প্রসঙ্গগত যে, ভাইরাল ছবিটিতে দুজন ব্যক্তির মাঝে পুলিশ সদস্যটিকে দেখা যাচ্ছে, এবং তাদের সামনে সাইনবোর্ডটি রয়েছে। অথচ বনিক বার্তা লোগোসহ যে ছবি তাঁদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে সেখানে কোনো সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে এই বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে যে, বণিক বার্তার ছবিতে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে একটি ভূয়া সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে বণিক বার্তার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও প্রতিবেদন ও প্রকাশ করা হয়েছে। তা দেখতে পাবেন এখানে। একই ঘটনার উপরে বার্তা ২৪ নামক একটি নিউজ পোর্টাল থেকে প্রকাশিত আর একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। এই প্রতিবেদনটিতেও যে ফিচার ইমেজ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে কোনো সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায়নি। অথচ ভাইরাল ছবিটির সাথে এই ছবিটিরও সম্পূর্ণ মিল পাওয়া যাচ্ছে।
বলা বাহুল্য, ভাইরাল ছবিটি ২০২১ সালেও একই দাবিতে অর্থাৎ “বঙ্গবন্ধু গাঁজা খামার” ক্যাপশনে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান boombd ২০২১ সালে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভাইরাল ছবি এবং এ ধরণের দাবিকে তারা মিথ্যা চিহ্নিত করে। বুম বিডি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
সুতরাং, বর্তমানে ফেসবুকে যেই ছবিটি ভাইরাল হয়েছে তা যে এডিটের সাহায্যে বানানো হয়েছে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাই প্রমাণিত হয়েছে।
সঙ্গত কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিকৃত” সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।