ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ মোমবাতি হাতে এক বৃদ্ধার দুটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। ছবিগুলোরর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, শতবর্ষী এই নারী ১৫ আগস্ট ২০২৪ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত তার স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে গেছিলেন।
আসল ঘটনাঃ দাবিটি মিথ্যা। ছবিতে দেখানো এই নারীর নাম মায়া রাণি চক্রবর্তী, যার বয়স ৯০ বছর। ৯ আগস্ট ২০২৪ কলকাতার আর জি কর সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৌমিতা দেবনাথ নামের একজন নারী চিকিৎসককে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভকারীরা ১৪ আগস্ট ২০২৪ বুধবার পশ্চিমবঙ্গে “মেয়েরা রাত দখল করো” নামের একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। মায়া রাণি চক্রবর্তীও সেই পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো মূলত সেই সময়কার। এর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর কোনো সম্পর্ক নেই।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত তাঁর স্মৃতিস্তম্ভে এ বছর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যারা এসেছিল তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একজন বৃদ্ধ নারীর ছবি শেয়ার করে তার ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে যে, তিনি এবছর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গেছিলেন। এছাড়াও, এই নারীকে সেখানে শতবর্ষী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ছবিগুলো ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৭ আগস্ট ২০২৪ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিগুলোর অনুরূপ ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত এই নারীর নাম মায়া রাণি চক্রবর্তী এবং তার বয়স ৯০ বছর। তিনি ভারতের কোলকাতার বাসিন্দা। ১৪ আগস্ট ২০২৪ এ, কলকাতার জোকা (Joka) এলাকায় তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স থেকে জোকার ইএসআই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের দিকে “মেয়েরা রাত দখল করো” নামের প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিন কিলোমিটার পদযাত্রা করেন। এই প্রতিবাদে হাজার হাজার নারী ও পুরুষের সমাগম হয়।
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট ২০২৪ এ কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৌমিতা দেবনাথ নামের একজন নারী চিকিতসককে ধর্ষণ এবং পরবর্তিতে হত্যা করা হয়। “মেয়েরা রাত দখল করো” কর্মসূচিটি হচ্ছে এই ঘটনারই প্রতিবাদী পদযাত্রা। শত শত মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মায়া রাণি চক্রবর্তীর প্রতিবাদী পদযাত্রা দম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে তিনি বলেন,
“এটা আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস। আমার পরিবারে অনেক মেয়ে আছে এবং সবাই কাজ করছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অন্য কেউ (আমার পরিবার/পাড়ায়) না গেলেও, এই প্রতিবাদের অংশ হতে আমি অন্তত একটি মোমবাতি নিয়ে বের হব” ।
দেখা যাচ্ছে যে, মায়া রাণি চক্রবর্তীর প্রতিবাদী পদযাত্রার ছবিগুলো ১৫ আগস্টের এক দিন আগে ভিন্ন এক প্রেক্ষিতে কোলকাতা থেকে ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ, ছবিগুলোর সাথে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।