“মেট্রোরেলের প্রযুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম, এমনকি এটি জাপানেও নেই” — এমন একটি পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুকে। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মেট্রোরেলে ব্যবহৃত এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম প্রযুক্তিটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম হলেও এটি জাপানে তৈরি ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রেলকার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ কয়েকটি জাপানি কোম্পানি তৈরি করেছে এবং জাপানি ইঞ্জিনিয়ারদের ডিজাইন ও তত্ত্বাবধায়নে দেশে মেট্রোরেলের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এই একই প্রযুক্তিতে জাপানেও মেট্রোরেল তৈরি ও পরিচালিত হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ক্যাপশনটির দাবিকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের ২০২১ সালের ১১মের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, মেট্রোরেলের কারগুলো তৈরি করেছে জাপানের কাওয়াসাকি ইন্ডাস্ট্রি (Kawasaki Heavy Industries)। মেট্রোরেলে কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম (CBTC) ব্যবহার করা হয়েছে, যা জাপানের রেলওয়ে সিগনাল সিস্টেমের মধ্যে সর্বাধুনিক। মেট্রোরেলের অটোমেটিক টিকেট গেটে যে পাসগুলো (প্লাস্টিকের টিকেট) ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর চিপ তৈরি করেছে জাপানিজ কোম্পানি সনি (Sony) । বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি মেট্রোরেলকার পরিচিতি অনুষ্ঠানে জানান, মেট্রোরেলতৈরিকরাহয়েছেজাপানিপ্রযুক্তিব্যবহারকরে। এছাড়া এই ট্রেনগুলোতে জাপানি প্রযুক্তি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ESS) ব্যবহার করা হয়েছে, যা তৈরি করেছে জাপানি কোম্পানি তোশিবা।
তোশিবার ওয়েবসাইটে নিউজ রিলিজ সেকশনে ২০২০ সালের মার্চের এই রিপোর্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঢাকা মেট্রোরেলে তাদের তৈরি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (DTCA) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মেট্রোরেল সংক্রান্ত ‘Technical Standard for the MRT in Bangladesh’ শিরোনামের ডকুমেন্ট থেকে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোরেলের ধোঁয়া নিষ্কাশন সিস্টেম তৈরি হচ্ছে জাপান মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশের ২৯ নাম্বার আর্টিকেল অনুযায়ী। এই অধ্যাদেশে মূলত জাপান রেলওয়ের প্রযুক্তিগত মানের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যায় যায় দিন পত্রিকার ২০১৯ সালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ঢাকামেট্রোরেলেরপাইলিংয়েরকাজেজাপানিপ্রযুক্তি ‘স্ক্রু–পাইপপাইলিং‘ ব্যবহারকরাহয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পরদিন জাগো নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে জাপানেযেপ্রযুক্তিব্যবহারহচ্ছে, সেইএকইপ্রযুক্তিতেমেট্রোরেলপরিচালনাকরাহচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউনের ২৭ তারিখের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলা ট্রিবিউন ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) আয়োজিত ‘শহরে আসছে মেট্রোরেল’ শীর্ষক বৈঠকিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. এম. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরাজাপানিটেকনোলোজিনিয়েআসছি।কিন্তুএটাকেমেইনটেইনকরাআমাদেরজন্যখুবইম্পর্টেন্ট।এটাকেযদিআমাদেরগতানুগতিকধারায়পরিচালনাকরিতাহলেজাপানিপ্রযুক্তিরসুফলপাওয়াযাবেনা।‘
একাত্তর টিভির ২৮ তারিখের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগুলো নিয়ে এসেছে বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি, এবং ৩০ জন বাংলাদেশি প্রকৌশলীকে জাপানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জাপানি ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল বিদ্যুতে চললেও এতে ব্যবহৃত এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সময় ট্রেনকে পরের স্টেশন পর্যন্ত টেনে নেবে। এই প্রযুক্তিটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঢাকা মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে জাপানি সংস্থা জাইকার (JICA) অর্থায়নে। রেলকার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরি হয়েছে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি সেগুলো সরবরাহ করেছে। দেশে মেট্রোরেলের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে জাপানি ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধায়নে তাদের করা ডিজাইনে। তাই মেট্রোরেলের প্রযুক্তি জাপানেও নেই এই দাবিটি মিথ্যা। তবে বেশ কিছু প্রযুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মত ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পুরো ক্যাপশনটিকে আংশিক মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?