মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকিট বা ভ্রমণ কার্ড থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি বাদ দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট (ডিএমটিসিএল)। পুরোনো নকশার ভ্রমণ কার্ডের জায়গায় সম্প্রতি তারা নতুন নকশার কার্ড তৈরি করেছে। নতুন কার্ডে পুরনো ছবির পরিবর্তে আছে মেট্রোট্রেনের প্রতীকী ছবি। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনাকারীদের একজন বলেছেন, “মেট্রোরেলের নতুন কার্ড থেকে জাতীয় বিষয়গুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। রঙ করা হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পতাকার রঙে।” এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একক যাত্রার টিকেটের ডিজাইন পরিবর্তন প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল একটি বক্তব্য দিয়েছে। ডিএমটিসিএল এর বক্তব্যের সারমর্ম এই যে- যাত্রীদের সুবিধার জন্য একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসধারী যাত্রীদের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর করা এবং সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনার জন্য একক যাত্রার টিকিটে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়, ডিজাইন চূড়ান্ত হয় এবং সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। এই পরিবর্তন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে হয়নি।
বক্তব্যটির বিস্তারিত অংশ:
নতুন টিকিটের নকশা গত ২৮ জুলাই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঠিকাদারকে জানানো হয়েছিল। এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়, ডিজাইন চূড়ান্ত হয় এবং সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়।
মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার একক যাত্রার টিকিট এবং ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫০০টি এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) পাস সরবরাহ করা হয়েছিল। একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসের নকশা একই রকম হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এমআরটি পাসধারী যাত্রীরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় কার্ড ছুঁইয়ে (টাচ) বের হন। একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রীদের জমা দিয়ে বের হতে হয়। দুই রকম কার্ডের নকশা একই রকম হওয়ায় একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রী এমআরটি পাসধারী যাত্রীকে অনুসরণ করেন। তারা কার্ড যন্ত্রে প্রবেশ না করিয়ে টাচ করান। ফলে ‘এক্সিট গেটে’ অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং সাময়িক সময়ের জন্য অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রী টিকিটটি জমা না দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নকশা একই রকম হওয়ায় কর্তব্যরত ব্যক্তিদের বিভ্রান্ত হতে হয়। ইতিমধ্যে দুই লাখের বেশি একক যাত্রার টিকিট হারিয়ে গেছে।
একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য ৫০ হাজার টিকিটের রং আগেই পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সুফল পাওয়া যায়নি। একক যাত্রার টিকিটের পরিমাণ কমে যাওয়ায় নতুন টিকিট সংগ্রহ ও নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ জানুয়ারি ২০২৪ চার লাখ টিকিট সংগ্রহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়। গত ২৮ জুলাই ২০২৪ একক যাত্রার টিকিটের নতুন নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হয় (আওয়ামি লীগ সরকারের আমলে)। সেই অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ নভেম্বর ২০ হাজার নতুন নকশার একক যাত্রার টিকিট সরবরাহ করে।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসধারী যাত্রীদের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর করা এবং সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনার জন্য একক যাত্রার টিকিটে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়, ডিজাইন চূড়ান্ত হয় এবং সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়।
ডিএমটিসিএল এর বক্তব্যের শেষ অংশ এই যে, তারা আশা করে একক যাত্রার টিকিটের নকশাসংক্রান্ত উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো বিভ্রান্তির অবসান হবে। তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে এখানে এবং এখানে।
থ্রেডসে বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখা যাবে এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট (ডিএমটিসিএল) এর বক্তব্য অনুযায়ী একক যাত্রার টিকিটের নকশার পরিবর্তনের কাজ শুরু এবং প্রায় শেষ হয়েছিল গত সরকারের সময়। নভেম্বর ১ তারিখে ডিএমটিসিএল নতুন কার্ড হাতে পেয়েছে। মূলত, একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসধারী যাত্রীদের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর করা এবং সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনার জন্যই কার্ডের নতুন নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সঙ্গত কারণে, ডিএমটিসিএল এর বক্তব্য আমলে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ চিহ্নিত করা হয়েছে।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh