২০ নভেম্বর রাতে ফেসবুকে হঠাৎ করে পোস্ট হতে থাকে, “মুগ্ধ মা'রা যায়নি, মুগ্ধ নামে কেউ ছিলই না! মুগ্ধ/স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ ছিলো। মানুষ একজনই!” রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে প্রায় একযোগে পোস্টগুলো ছড়ানো হয়। কোনো কোনো আইডি থেকে বলা হয়, “আবূ সাঈদের কবর দুদিন পর পর জিয়ারত করতে যায় কিন্তু মুগ্ধর কবর তো কেউ একবারও জিয়ারতে গেল না! মুগ্ধ'র ফেসবুক আইডির নাম পরিবর্তন হয়ে স্নিগ্ধ করা হয়েছে। এমনকি মুগ্ধ'র মৃত্যুতে তার বাবা মা কোনো মামলাও করেনি! শুনলাম শহীদ মীর মুগ্ধ নাকি অবশেষে স্নিগ্ধ রুপে ফিরে এসেছে!" ১৮ জুলাই মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেই মীর মুগ্ধ শহীদ হওয়া নিয়ে কোন সংশয় থাকে না। ফলে যথার্থ কারণে অতি সংবেদনশীল একটি বিষয়কে গুজবের বিষয় বানানোকে আমলে নিয়ে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সহকারে এ ধরনের বক্তব্যগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হল।
বনিক বার্তার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, “আহতদের সহযোগিতা করতে গিয়ে প্রাণ হারান মুগ্ধ”– এই শিরোনামে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ জুলাই উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। সে সংঘর্ষে আহত হয় অনেকে। সেদিন আহতদের যারা হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন, তাদেরই একজন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এমবিএর শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। সঙ্গে ছিল বন্ধু নাইমুর রহমান আশিক। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ একটি গুলি এসে লাগে মুগ্ধর কপালে। তাৎক্ষণিকভাবে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
প্রথম আলোর ৬ আগস্টের প্রতিবেদনে মুগ্ধ স্নিগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। তারপরও এখন যেন দেশটা ভালোভাবে চলে, সেটাই একমাত্র চাওয়া। মুগ্ধ সব সময় বলত, আমরা জঙ্গলে না থেকে সমাজে বাস করি। আর সমাজে একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে। দুর্নীতি হলে প্রতিবাদ করতে হবে। জাতিগতভাবে ভদ্র হতে হবে।’
প্রথম আলোতে শহীদ মীর মুগ্ধকে নিয়ে কয়েকটিপ্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মীর মুগ্ধকে নিয়ে সিএনএন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১২ আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “টি–শার্টের হাতা ব্যবহার করে জ্বালাপোড়া করা চোখ থেকে কাঁদানে গ্যাস মুছতে মুছতে ২৫ বছর বয়সী তরুণ মুগ্ধ ভিড়ের মধ্যে চিৎকার করছেন, বিক্ষোভ করা তরুণদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছেন। ১৫ মিনিট পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়েছিল।”
বিবিসি বাংলা নিউজের খবরে বলা হয়, গত ১৮ই জুলাই মুগ্ধ’র রক্তে যখন রাস্তা ভেসে যাচ্ছিল, তখন তার বন্ধুরা বহু সংগ্রাম করেও সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিতে পারেননি। অসংখ্য পুলিশ অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসছিলো। কিছুক্ষণ পর রিকশায় করে মুগ্ধকে নিকটস্থ ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মীর মুগ্ধের স্মরণে তোরণ নির্মাণসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন এবং মীর স্নিগ্ধর ফেসবুক আইডিতে বন্ধুদের সঙ্গে দুই ভাইয়ের ছবি আছে।
গত পাঁচ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ বিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে বিভিন্ন ফেক আইডি তৎপর হয়ে ওঠে। শহীদ মীর মুগ্ধ আর তার ভাই মীর স্নিগ্ধ একজনই, মীর মুগ্ধ মারা যান নি; এসব অপপ্রচারকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh