“একুশ মানে অন্য দলের মহাসচিবকে শহীদ মিনারে ঢুকতে না দেওয়া” এমন শিরোনামে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, গত একুশে ফেব্রুয়ারি বিএনপির মহাসচিবকে শহীদ মিনারে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো ২০১৮ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির। সেই বছর তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দলের অন্যান্য নেতা কর্মীদের সাথে ফুল দিয়েছিলেন। তখনও তাকে শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা প্রদান করা হয়নি। তবে, চলতি বছর তিনি শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাননি। অন্যদিকে, তাকে কখনও শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল কি না এ সংক্রান্ত তথ্য মূল ধারার সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স থেকে পাওয়া যায়নি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কখনও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল কি না এ ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি বিএনপির তরফ থেকেও এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে, সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলামকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছিল। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় খন্দকার মোশাররফ অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তাছাড়া, শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার সময় বিশৃঙ্খলা, সমন্বয়হীনতা ও বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পার্ঘ অর্পণ কর্মসূচিতে অসৌজন্যমূলক আচরণ নিয়েও অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল”, বিএনপির তরফ থেকে এমন কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মির্জা ফখরুলকে পার্শ্ববর্তী ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেই দিনই হাসপাতাল থেকে তিনি বাসায় ফিরে যান। তার একান্ত সহকারী ইউনুছ আলী প্রথম আলোকে বলেন,
“স্যারের (মির্জা ফখরুল ইসলাম) ইসিজি, ইকো, আলট্রাসনোগ্রাফ, ট্রপোনিনসহ স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আল্লাহর রহমতে সব রিপোর্ট ভালো। চিকিৎসকেরা তিন-চার দিন বিশ্রামে থাকতে বলেছেন।”
বিএনপির মহাসচিবের শহীদ মিনারে না যাওয়ার পেছনে এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশৃংখলাকে কেন্দ্র গত ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন মির্জা ফখরুল। সেখানে তাকে শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তিনি করেন নি।
অন্যদিকে, ভাইরাল এই পোস্টগুলো ২০১৮ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে বছর মির্জা ফখরুল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন।
এই ছবির সাথে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবি গুলোর বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমনঃ মির্জা ফখরুল ইসলামের পাঞ্জাবির রঙ, পাঞ্জাবির ডিজাইন, বুকের ব্যাচ ইত্যাদি।
এছাড়া, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের অধিকার ও ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই” ইত্যাদি। কিন্তু তাকে শহীদ মিনারে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে মর্মে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি।
সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?