যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট তৈরি করেছে এবং পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে– এমন ক্যাপশনে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পোস্টের ক্যাপশনের সাথে অপ্রাসঙ্গিক এটিএন নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন যুক্ত করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। ক্যাপশনের দাবির সপক্ষে মূলধারার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিছু পাওয়া যায় না। এছাড়া ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ যুক্ত্ররাষ্ট্রের আইনে নিয়মবহির্ভূত। তাই ভিত্তিহীন ক্যাপশনের জন্য ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে “বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিচ্ছে।
বিভ্রান্তির উৎস:
News Report ও চকরিয়া মিডিয়া টিভি নামক দুটি পেইজ থেকে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে। দেখুন এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:
“ভিসানিষেধাজ্ঞারলিস্টপ্রকাশকরলোযুক্তরাষ্ট্র, পুলিশওনেতাদেরভিসাবাতিল” – পোস্টের ক্যাপশনের এই দাবি্র সত্যতা জানতে বাংলাদেশে যুক্ত্ররাষ্ট্র দূতাবাস অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উক্ত তালিকার সন্ধান করা হয়। দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করে নি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। পরবর্তীতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকার সন্ধান চালানো হয়। দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করে নি।
উল্লেখ্য, এ বছর ২৪ মে মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে আরোপিত ভিসা নীতির বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার অধীনেআইনপ্রয়োগকারীসংস্থা, ক্ষমতাসীনদলএবংবিরোধীদলেরসদস্যরাঅন্তর্ভুক্ত আছেন।মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু ২২ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান,যুক্তরাষ্ট্রেরনতুনভিসানীতিরঅধীনেবাংলাদেশের যারানিষেধাজ্ঞাপেয়েছেনতাদেরনামযুক্তরাষ্ট্রপ্রকাশকরবেনা। কারণ, নিয়মানুযায়ী ব্যক্তিগতভিসাবাতিলসহভিসাররেকর্ডমার্কিনআইনেরঅধীনেগোপনরাখাহয়।
নিয়মেরবাইরেগিয়েযুক্তরাষ্ট্রযদিভিসানিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদেরতালিকা প্রকাশকরেথাকতোতাহলেস্বাভাবিকভাবেইমূলধারারসংবাদমাধ্যমে সেটির উল্লেখ থাকতো।
এদিকে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে সেখানে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা সম্পর্কিত কোনো সংবাদ নেই, বরং এটিএন নিউজ থেকে ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত “বাংলাদেশকে ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের” শিরোনামের একটি প্রতিবেদন (ইউটিউবে দেখুন এখানে) দিয়ে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। এই ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – সম্প্রতিযুক্তরাষ্ট্রেরপররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়থেকেপ্রকাশিত ‘কান্ট্রিটেরোরিজমরিপোর্টে’ উল্লেখ করা হয়েছেযে, সন্দেহভাজনব্যক্তিদেরনিয়ে ‘অ্যালার্টলিস্ট’ তৈরিরজন্যমার্কিনপ্রকল্পেরএকটিপ্রস্তাববাংলাদেশসরকারবিবেচনাকরছে। এবিষয়েপররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়েরএককর্মকর্তাবলেছেন, এধরনেরসহযোগিতারপ্রস্তাবযুক্তরাষ্ট্রবিভিন্নদেশকেদিয়েছে, এটিযাচাই–বাছাইকরেসিদ্ধান্তনেওয়া হবে।
স্পষ্টত, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদেরতালিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাবিত অ্যালার্ট লিস্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি ভিন্ন দুটো তালিকা।
সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসানিষেধাজ্ঞারলিস্ট তৈরি করেছে এবংপুলিশওনেতাদেরভিসাবাতিল করা হয়েছে– ক্যাপশনের এ দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো সংবাদ পরিবেশন করা হয় নি ভিডিওতে। যেহেতু ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশিত হয় নি তাই কোন কোন পুলিশ সদস্য এবং নেতার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে সেটি জানাও সম্ভব নয়। তাই মিথ্যা ক্যাপশনকে বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।