সাম্প্রতিক সময়ে “আপত্তিকর অবস্থায় আবাসিক হোটেলে আটক ৭১ টিভির উপস্থাপিকা ফারজানা মিথিলা” এই শিরোনামে ৭১ টেলিভিশনের উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানার নামে একটি গুজব ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসেও অনুরূপ গুজব ভাইরাল হয়েছিল। এসব গুজবের কখনো কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
গুজবেরউৎস
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ,এখানে। দেখা যাচ্ছে, এসব পোস্ট ১৫ই আগস্ট, ১৭ই আগস্ট এবং ১৮ই আগস্ট পোস্ট করা হয়েছিল।
এসব পোস্টের ক্যাপশনে বলা হচ্ছে,
🔴৭১ টিবির সাংঘাতিক ও উপস্থাপিকা ফারজানা মিথিলা আবাসিক হোটেলে ধরা খাইছে,,‼️
গত বুধবার বিকেলে বাড্ডার এক আবাসিক হোটেলে RFL কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ৭১ টিভির সাংবাদিক ও উপস্থাপিকা ফারজানা মিথিলাকে আটক করেছে RAB,,,,,,!!!
এ ঘটনায় ফারজানা মিথিলার স্বামী বাদি হয়ে মিরপুর থানায় এক সাধারণ ডায়েরি করেন,,,!!”
তবে বর্তমান সময় ছাড়াও ২০২১ সালের ২৯ই এপ্রিল থেকে একই ধরণের পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা যায়। ২০২১ সালে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান
গুগল কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সার্চ করে দেখা যায় “বালের কণ্ঠ” নামে একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মিথিলা ফারজানার নামে ভাইরাল হওয়া তথ্যগুলো ছড়ানো হয়। উক্ত ওয়েবসাইটে “কালের কণ্ঠ” নামক জাতীয় দৈনিকের মতো একই ধরণের লোগো ব্যবহার করা হয়। উক্ত ওয়েবসাইটে বলা হয় “গত বুধবার (২১ই এপ্রিল,২০২১) বিকেলে বাড্ডার এক আবাসিক হোটেলে RFL কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ৭১ টিভির সাংবাদিক ও উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানাকে আটক করেছে RAB, এ ঘটনায় মিথিলা ফারজানার স্বামী বাদি হয়ে মিরপুর থানায় এক সাধারণ ডায়েরি করেন,
RAB জানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন মিথিলা ফারজানা এই হোটেলে নিয়মিত কয়েকজন পুরুষ নিয়ে আশা (আসা) যাওয়া করতেন।” একই ধরণের তথ্য ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টেও পাওয়া যায়। তাছাড়া ২৮ তারিখের পর থেকেই ফেসবুকে পোস্টগুলো ভাইরাল হয়। তাই এ থেকে ধারণা করা যায় “বালের কণ্ঠ” নামক ওয়েব সাইট থেকেই তথ্যগুলো মূলত ছড়ানো হয়েছে।
“বালের কণ্ঠ” এর আর্টিকেল দেখুন এখানে,
মিথিলা ফারজানা একাত্তর টেলিভিশনের উপস্থাপিকা। তিনি “একাত্তর জার্নাল” নামক একাত্তর টেলিভিশনের একটি সংবাদ অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করে থাকেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। তিনি যদি ২১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে র্যাবের হাতে আটক হন তাহলে উক্ত প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ২১ এপ্রিল, ২০২১ তারিখের “একাত্তর জার্নাল” অনুষ্ঠানেও তিনিই উপস্থাপনা করেছেন।
একাত্তর টিভি থেকে সম্প্রচারিত একাত্তর জার্নালের অনুষ্ঠানটি ইউটিউবে দেখুন এখানে–
ভাইরাল ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট Rumor Scanner ২৯ এপ্রিল, ২০২১ সালে রিপোর্ট প্রকাশ করে। উক্ত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে মিথিলা ফারজানা গুলশান থানার অধীন অবস্থিত নিকেতনের বাসিন্দা। এবং ভাইরাল পোস্টগুলোতে দাবি করা হয় মিথিলা ফারজানাকে রাজধানীর বাড্ডা থেকে আটক করা হয়। সেহেতু কোন মামলা করা হলে তা গুলশান বা বাড্ডা থানায় করা হবে। কিন্তু ভাইরাল পোস্টগুলোতে বলা হয় মিথিলা ফারজানার স্বামী মিরপুর থানায় মামলা করেছে। কিন্তু মিরপুর থানার সাথে উক্ত ঘটনার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
Rummor Scanner -এর একই রিপোর্টে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগের কথা বলা হয়। এসময় কথিত জিডির ব্যাপারে মিথিলা ফারজানার স্বামী জ্যোতি জয়নুদ্দিন বলেন “তার স্ত্রীর নামে প্রচারিত আটকের তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও অপপ্রচার। এবং এই কথিত ইস্যুতে তিনি দেশের কোন থানায় কোন জিডি করেন নি।”
২৯ই এপ্রিল,২০২২ তারিখে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্টগুলো ভাইরাল হতে থাকলে মিথিলা ফারজানা তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ৩০ এপ্রিল,২০২১ তারিখে একটা পোস্ট করেন। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয় “গুজব ছড়ানোর আগে ভাববেন। দেশে এর বিরূদ্ধে আইন আছে এবং তার প্রয়োগও আছে।” পোস্টের একটি ছবিতে দেখা যায় একজন ব্যক্তির মুখ কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া। আরেকটি পোস্টে একটি মুচলেকা দেওয়ার লিখিত ছবি দেওয়া যেখানে আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক ছবির শেয়ার করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন।
৪ঠা মে,২০২১ সালে মিথিলা ফারজানা আরও কিছু ছবি পোস্ট করেন। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন “এদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে নিশ্চিত করেছে এই প্রক্রিয়া চলমান। গুজব সৃষ্টি এবং ছড়ানোর আগে চিন্তা করবেন।#noterrorismbangladesh।” উক্ত পোস্টে দেখা যায় যারা যারা গুজবটি ছড়িয়েছিলেন তারা মিথিলার ফারজানার নামে ছড়ানো আপত্তিকর পোস্টগুলোকে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং গুজব বলছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের পোস্ট করা থেকে বিরত থাকবেন বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
৪ঠা মে,২০২১ তারিখে ঢাকা ট্রিবিউনের আরেকটি পোস্ট থেকে জানা যায় ফেসবুকে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য মিথিলা ফারজানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্থ হন। এই সংবাদ থেকে জানা যায় গুজব ছড়ানোর জন্য পুলিশ ৬ জনকে আটক করে। প্রতিবেদনে ৪ মে মিথিলা ফারজানার শেয়ারকৃত পোস্টের কথাও বলা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মিথিলা ফারজানাকে নিয়ে ফেসবুকে ছড়ানো আপত্তিকর গুজবগুলো আবারো ভাইরাল হয়। সেখানে দাবি করা হয়, তাকে র্যাব গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় মিথিলা ফারজানা ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখে সরাসরি প্রচারিত একাত্তর জার্নালের উপস্থাপনা করছেন। তাই বলা যায়, সাম্প্রতিক সময়েও মিথিলা ফারজানা গ্রেফতার হননি।
অতএব এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায় ভাইরাল হওয়া খবরগুলো ভূয়া। মিথিলা ফারজানা ২০২১ সালে, কিংবা সম্প্রতি,কখনোই গ্রেফতার হননি । তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলিকে “গুজব” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?