ভারতের মিজোরাম গেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ বন্যায় ভাসছে- এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটি কমপক্ষে ৪ বছর আগের এবং এটি মিজোরাম প্রদেশের কোনো বাঁধ না। এর নাম “মাহি বাজাজ সাগর ডেম” এবং এটি ভারতের রাজস্থান প্রদেশে অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে এর অবস্থান। এর সাথে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল ভিডিওতে একটি বাঁধকে কেন্দ্র করে পর্যটকের ভিড় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, “ভারতের মিজোরাম গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন ঠেলা সামলাও,ভারতে পর্যাটক মজা নিচ্ছে,বাংলাদেশের জনগণ বন্যায় ভাসছে”। অনেকে আবার এমন পরিস্থিতি দেখে ২০০৪ সালের বন্যার মত অবস্থা হবে বলে দাবি করছেন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভিডিও থেকে নেয়া স্থিরচিত্রের সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে২০১৭ সালে প্রকাশিত এমন অনেকগুলো ভিডিও পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দাবি দেখতে পাওয়া যায়। কেউ দাবি করছেন এটি হিমাচল প্রদেশের বাঁধ, কেউ কেউ বলছেন ফারাক্কা বাঁধ আবার কেউ বলছেন গুজরাটের কোনো বাঁধ।
পুনরায় অনুসন্ধানের পর, ২৯ জুলাই, ২০১৭ এ প্রকাশিত “Mahi dak Rajasthan ful video 2017” শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওটি পাওয়া যায়। চার বছরেরও বেশি পুরানো এই ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া রাজস্থানের বাঁধটি বর্তমানে “মিজোরামের গেট”নামে ভাইরাল হচ্ছে।
পরবর্তীতে, এই বাঁধের সঠিক পরিচয় জানতে অনুসন্ধান করা হলে ট্রিপএডভাইজারের একটি ফটোস্টোরি সামনে আসে। ভিডিওতে থাকা বাঁধটির সাথে এর বেশ মিল পাওয়া যায়। এরপর মাহি বাঁধের উইকিপিডিয়া পেজ থেকে আরোও কয়েকটি ছবিসহ এর অবস্থান জানতে পারা যায়। বাঁধটি ভারতের রাজস্থান প্রদেশে অবস্থিত। এর নাম “মাহি বাজাজ সাগর”।
এখানে থাকা ছবির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় এই বাঁধ এবং বর্তমানে ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো বাঁধ একই।
মাহি বাঁধের অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০২৯ কিলোমিটার। এই বাঁধের সাথে বাংলাদেশের কোনো সীমান্তরেখাও নেই।
এছাড়াও মিজোরামের কোনো বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা হচ্ছে বা হবে,এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সিলেটে চলমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভারি পাহাড়ি ঢলকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
সুতরাং, বিষয়টি নিশ্চিত যে ভাইরাল ভিডিওটি কমপক্ষে ৪ বছর পুরনো এবং এটি মিজোরামের কোনো বাঁধ নয়। ভারতের রাজস্থানে এর অবস্থান, যা বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। এর সাথে বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই পুরনো ভিডিওর এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?