সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এক শিশুকে “গাইবান্ধা এর অনু মহন্ত” দাবি করে ব্লাড ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গেছে যে উক্ত পোস্টে ব্যবহৃত ছবিগুলো ভারতের ”Ketto” নামক একটি ফান্ডরাইজার ওয়েবসাইটের প্রায় দুই বছরের পুরানো একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে এবং শিশুটির নাম সায়ন্তিকা। সে কিডনি রোগে ভুগছিলো এবং তার কিডনি প্রতিস্থাপনের (transplantation) জন্য ছয় লক্ষ রুপি প্রয়োজন ছিলো। উক্ত ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা গেছে যে, সায়ন্তিকা সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং তার জন্য বর্তমানে ফান্ডরাইজিংটি বন্ধ আছে। সুতরাং, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে যে শিশুটিকে অনু মহন্ত দাবি করে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করা হচ্ছে তার আসল নাম সায়ন্তিকা এবং সে একজন ভারতীয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
সামাজিক মাধ্যমে অর্থ সাহায্য চেয়ে শেয়ারকৃত পোস্টের শিশুটির নাম অনু মহন্ত কিনা এবং তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় কিনা তা যাচাই করতে আমরা পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি এবং “Ketto” নামক একটি ভারতীয় ফান্ডরাইজার ওয়েবসাইট এ “Battling end-stage kidney disease, my daughter needs Rs 6 lakh to survive” শীর্ষক প্রায় দুই বছরের পুরানো একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। “Ketto” এর ঐ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে ছবির শিশুটির নাম সায়ন্তিকা এবং সে কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত। উক্ত প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ভারতের বেঙ্গালোর (Bangalore) এ অবস্থিত সেইন্ট জন’স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডকুমেন্টসমূহ থেকে জানা গেছে যে সায়ন্তিকার কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ছয় লক্ষ রুপি প্রয়োজন ছিলো এবং তার মা তাকে স্বেচ্ছায় কিডনি দান করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
“Ketto” এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেও ১২ই আগস্ট ২০২১ এ প্রকাশিত একটি পোস্টেও সায়ন্তিকা এবং তার বাবা-মায়ের ছবি প্রকাশ করে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়া হয়।
“Ketto” এর ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা গেছে যে, সায়ন্তিকা এখন সুস্থ আছে এবং তার জন্য ফান্ডরাইজিং বর্তমানে বন্ধ আছে। উক্ত প্রতিবেদনটির নিচে সায়ন্তিকার মা তাপসী বেজ (Tapasi Bej) একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বলেছেন, “আমার মেয়েকে দ্বিতীয় জীবন দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ! আপনাদের মহানুভবতা আমরা কখনও ভুলবো না।” উক্ত বার্তাটিতে আরও উল্লেখ আছে, সায়ন্তিকা এখন ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করছে, স্কুলে যাচ্ছে, এবং তার বয়স এখন ১৩ বছর ছয় মাস এবং তার ওজন ২৯ কেজি।
তাছাড়া, অনু মহন্ত দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোতে উল্লেখিত পারসোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার এর মধ্যে তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে, যা সন্দেহজনক। সাধারণত সাহায্য চাওয়ার প্রকৃত পোস্টগুলোতে একটি মোবাইল নাম্বার বা অ্যাকাউন্ট নাম্বার ব্যবহার হতে দেখা যায়।
অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে সামাজিক মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার পোস্টটিতে ব্যবহৃত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ছবিগুলোর শিশুটির নাম সায়ন্তিকা এবং সে একজন ভারতীয়।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?