সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে একটি পোস্টে সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ মোড়ানো একটি শিশুর ছবি এবং একজন কান্নারত নারীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে পোস্টে ব্যবহৃত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং সেগুলো পৃথক পৃথক সময় এবং স্থানের ছবি। তাছাড়া, পোস্টে উল্লেখিত বিকাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্ট নাম্বারের ক্ষেত্রেও পোস্টভেদে তারতম্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত সাহায্য চাওয়ার পোস্টটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
(১) সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শিশুর ছবিটি কি সাম্প্রতিক সময়ে তোলা?
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশুটির নাম তানহা, তার বাবার নাম মোঃ মানিক, এবং শিশুটির বাড়ির ঠিকানা দেওয়া আছে – ময়মনসিংহ, শম্ভুগঞ্জ চর, কালীবাড়ি। ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত পোস্টটিতে ব্যবহৃত শিশুটির ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছবিটি নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ৫ই জানুয়ারি, ২০২০ এ “Adhuro Sapana” নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টকৃত একটি ছবি খুঁজে পেয়েছে যার সাথে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারকৃত পোস্টে ব্যবহৃত শিশুর ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। তাছাড়া, “Adhuro Sapana” – এর পোস্টে ব্যবহৃত ক্যাপশনের ভাষা যাচাই করে জানা গিয়েছে যে এটি নেপালি ভাষা। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টে ব্যবহৃত সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শিশুর ছবিটি তিন বছরের পুরানো অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
(২) কান্নারত নারীটির পরিচয় কি?
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত সাহায্য চাওয়ার পোস্টটিতে ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশুটির ছবির সাথে একজন কান্নারত নারীর ছবিও লক্ষ্য করা গিয়েছে। কান্নারত নারীটির পরিচয় জানতে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ছবিটি নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এবং ১৭ই জুলাই, ২০১২ এ ইন্দোনেশিয়ার “REPUBLIKA” নামক অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত “Indonesia Pushes Myanmar to Solve Rohingya Problems” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারকৃত কান্নারত নারীর ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। “REPUBLIKA” এর প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজের ক্যাপশন পড়ে জানা যাচ্ছে যে, ঐ নারীটি একজন রোহিঙ্গা মুসলিম নারী এবং তার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীটির ছবি তুলেছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর সৌরভ দাস নামক একজন ফটোগ্রাফার। এছাড়াও, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন নিয়ে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে ঐ কান্নারত নারীটির ছবি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত কান্নারত নারীটি বাংলাদেশের নয় এবং তার সাথে ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশুটির কোন সম্পর্ক নেই।
(৩) সাহায্য চাওয়ার পোস্টগুলোতে উল্লেখিত বিকাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্ট নাম্বারে কোন তারতম্য আছে?
হ্যাঁ, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত সাহায্য চাওয়ার পোস্টগুলোতে উল্লেখিত বিকাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্ট নাম্বারগুলোর মাঝে পোস্টভেদে তারতম্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। শেয়ারকৃত পোস্টগুলোতে চারটি ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নাম্বারের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে যা সন্দেহজনক। সাধারণত প্রকৃত কোন সাহায্য চাওয়ার পোস্টে একটি মোবাইল নাম্বার বা অ্যাকাউন্ট নাম্বার ব্যবহার হতে দেখা যায়।
অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত সাহায্য চাওয়ার পোস্টটিতে ব্যবহৃত সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশুটির এবং কান্নারত নারীটির ছবি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং তারা কেউই বাংলাদেশী নন।
উল্লেখ্য, সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শিশুটির ছবি ব্যবহার করে ২০২০ সাল থেকেই ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করা হচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে। জনপ্রিয় দুটো ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট Boom Bangladesh এবং Aajtak India ২০২১ সালে পুরানো ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুটো ফ্যাক্ট-চেকিং রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলো।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত সাহায্য চাওয়ার পোস্টটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?