যা দাবি করা হচ্ছে: ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেভেন সিস্টার্সের পতাকা উত্তোলন করেছে স্বাধীনতাকামী মণিপুরের শিক্ষার্থীরা।
যা পাওয়া যাচ্ছে: মণিপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভারতের জাতীয় পতাকা নামায়নি। থৌবাল ডিসি অফিসের মেইন গেটে থাকা ঐতিহ্যবাহী ‘সালাই টারেট’ এর পুরনো পতাকাটি পরিবর্তন করে নতুন এবং অপেক্ষাকৃত বড় ‘সালাই টারেট’ পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঐতিহ্যবাহী এই পতাকাটি ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্বশীল পতাকা নয়, বরং এটি মনিপুরের মেইতেই জনগোষ্ঠীর ৭টা গোত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে।
গুজবের উৎস
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কয়েকটি নমুনা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
সম্প্রতি ভারতের মনিপুরে চলমান আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি ভবনে উঠে সেখানে থাকা পতাকা নামিয়ে আরেকটি পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারি দাবি করছেন মনিপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভারতের পতাকা নামিয়ে সেভেন সিস্টার্সের পতাকা উত্তোলন করেছে। নতুন পতাকায় ৭টি রঙের স্ট্রাইপ দেখা গেলেও পুরনো পতাকার ডিজাইন এই ভিডিও থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়নি।
ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে রেখে সেভেন সিস্টার্সের সাতরঙা পতাকা উড়িয়েছে মনিপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা — এমন খবর বাংলাদেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোও প্রচার করেছে। বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন কয়েকটি খবর দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে মনিপুর পুলিশের এক্স একাউন্ট থেকে জানানো হয় থৌবালের ডিসি অফিস থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা নামানোর তথ্যটি ভুয়া। আন্দোলনকারী ছাত্ররা ডিসি অফিসের গেটের পুরনো এবং জীর্ণ সালাই টারেট পতাকা পরিবর্তনের চেষ্টা করে। সালাই টারেট পতাকা সাত রঙ বিশিষ্ট । সালাই টারেট পতাকা, যা কাংলেইপাকের পতাকা নামেও পরিচিত। এটি সাত রঙের একটি আয়তাকার পতাকা যেটি মনিপুরের মেইতেই জনজাতির সাতটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। বিক্ষোভকারীরা চলে যাওয়ার পর পুরনো এবং নতুন দুইটা পতাকাই নামিয়ে ফেলা হয়।
৯ই সেপ্টেম্বর EastMojo থৌবাল থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে থৌবাল ডেপুটি কমিশনার সুবাস সিং বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি পুরনো সালাই টারেট পতাকা সরিয়ে একটি নতুন সালাই টারেট পতাকা উত্তোলন করে। এই পতাকা পরে সরিয়ে ফেলা হয়। তিনি আরো নিশ্চিত করেন যে, ভারতের জাতীয় পতাকা মূল অফিস কমপ্লেক্সে উড়ানো হয়। ভাইরাল ভিডিওতে পতাকাটিকে অফিসের গেটের কাছে উত্তোলন করতে দেখা যায়।
১০ই সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া টুডে নর্থইস্টের ফেসবুক পেজে একটা পোস্ট করে জানানো হয় ভারতীয় পতাকা নামানোর ঘটনা পুরোটা মিথ্যা। উক্ত খবরে সংবাদ পরিবেশক জানান, সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছিল, তারা চায় না তাদের সালাই টারেট পতাকা এভাবে ঝুলে থাকুক। এটা থেকে পরিষ্কার হয় যে ডিসি অফিসের মেইন গেটে ভারতীয় কোন পতাকা ছিলো না। সেখানে পুরনো সালাই টারেট পতাকা ঝুলে ছিলো। শিক্ষার্থীরা সেটাকে পরিবর্তন করে নতুন একটি সালাই টারেট পতাকা উত্তোলন করেন।
উক্ত ঘটনা নিয়ে আজতাক বাংলা এবং কলকাতা ২৪x৭ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করেছে। তাদের অনুসন্ধানেও দেখা যাচ্ছে ভারতের জাতীয় পতাকা নয়। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পুরনো সালাই টারেট পতাকা খুলে নতুন পতাকা লাগিয়েছে। সিদ্ধান্ত:
‘ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেভেন সিস্টার্সের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে’- থ্রেডসে ছড়িয়ে পড়া এ ধরনের দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচের পক্ষ থেকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।