মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণকে সামনে রেখে ১ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে- দাবি করে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এমন কোনো বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে ভাষাগত এবং বানান নিয়ে রয়েছে একাধিক অসংগতি। একুশে টিভির একটি প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালককে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া বলা হয়।
ভাইরাল এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, আগামী ১ জুন থেকে ২৯ জুন মাঙ্কিপক্সের জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
উক্ত বিজ্ঞপ্তির সত্যতা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে, এ সম্পর্কিত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া দেশের প্রথম সারির কোনো গণমাধ্যমেও এর পক্ষে কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করা হলে সেখানেও এ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। কিন্তু ইউজিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো নির্দেশনা পেয়েছে বলেও অনুসন্ধানে জানা যায়নি।
ভাইরাল এই বিজ্ঞপ্তিটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে কয়েকটি অসংগতি পাওয়া যায়।
প্রথমত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে সেখানে তারিখ লেখা হয় বিজ্ঞপ্তির উপরের ডান পাশে। প্রথমে থাকে বাংলা তারিখ এবং এর নিচে ইংরেজি তারিখ। কিন্তু ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিতে তারিখ রয়েছে বাঁ পাশে এবং ডিজাইনেও ত্রুটি রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞপ্তিতে লিখা রয়েছে “আদেশক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি, এপি”। এখানে কমপক্ষে দুইটি ভুল পাওয়া যায়।
১. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে কোনো মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারের নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে যে মন্ত্রণালয়টি রয়েছে তার মন্ত্রী হচ্ছেন ডা. দীপু মনি। এই মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অর্থাৎ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে কিছু নেই।
২. ডা. দীপু মনির পরিচয় লিখতে গিয়ে তাঁর নামের শেষে “এপি” লিখা হয়। কিন্তু এমন কোনো পরিচয় ডা. দীপু মনির নামের সাথে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো এম.পি অর্থাৎ মেম্বার অব পার্লামেন্টের জায়গায় ভুল করে এপি লিখা হয়ে থাকতে পারে। একই ভুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামসহ মোট তিন জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।
এতগুলো অসংগতি বিষয়টি নিশ্চিত করে যে এই বিজ্ঞপ্তিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়।
পুনরায় অনুসন্ধানে একুশে টিভি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া, সতর্ক থাকার পরামর্শ” শিরোনামে ২৮ মে, ২০২২ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া চিহ্নিত করা হয়। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল আহমেদের উদ্ধৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ থেকে দেওয়া হয়। পরে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে। তিনি আরও বলেন, ‘যে ফরমেটে ছুটির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, সেটি দেখে আমি নিশ্চিত এটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এ ধরনের ভুয়া বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি”।
মাঙ্কিপক্স সম্পর্কিত ফ্যাক্টওয়াচের একটি ফ্যাক্টফাইল পড়ুন এখানে।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে ভাইরাল এই বিজ্ঞপ্তিটি ভিত্তিহীন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা অফিসিয়াল কোনো মাধ্যমেই এমন কোনো বিজ্ঞপ্তির সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং একুশে টিভির প্রতিবেদনে বিষয়টিকে ভুয়া চিহ্নিত করে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এত অসংগতি বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?