সম্প্রতি “হে আল্লাহ মোদিকে আগামীকাল পর্যন্ত তোমার গজব নাজিল কর” শিরোনামে মসজিদ ভাঙার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি আজ থেকে কমপক্ষে তিন বছর আগের। ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বিবিসি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু মসজিদটি মূলত কোন জায়গায় অবস্থিত তার সঠিক কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। যেহেতু (১) ভিডিওটি তিন বছর আগের, (২) এটি ভাঙার পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি বিষয়ে জানা যায় নি এবং (৩) মূল ভিডিওর সাউন্ডট্র্যাক এডিট করে উর্দূভাষায় কিছু উস্কানিমূলক বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।
গত অক্টোবর মাসের দুইটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি দেখুন এখানে এবং এখানে।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই ভিডিও দুইটির দৃশ্য এক হলেও শব্দ ভিন্ন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই ভিডিওটি। এখানে উর্দু ভাষার একটি বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে মুসলমানদের অত্যাচার করা হচ্ছে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছে না। তাই সবাইকে ভিডিওটি অন্তত শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছে। আরোও বলা হচ্ছে, এমন ঘটনার বিপরীতে তার (ভিডিওতে কণ্ঠ দেয়া ব্যক্তি) দেশের হিন্দুদেরকেও সমানভাবে অত্যাচার করা উচিত।
ফ্যাক্টুওয়াচেরঅনুসন্ধান
ভিডিও দুইটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এগুলো মূলত স্ক্রিন রেকর্ডের মাধ্যমে ধারণ করা। ভিডিওটির ৩১ সেকেন্ডের মাথায় একটি মোবাইল নাম্বার সহ কিছু বিবরণ স্ক্রিনে চলে আসে। ওই মোবাইল নাম্বারের কান্ট্রি কোড থেকে জানা যায় নাম্বারটি পাকিস্তানের এবং ভিডিওতে কণ্ঠ দেওয়া ওই ব্যক্তির ভাষাও উর্দু। তাই ধারণা করা যায় যে, ভিডিওটিতে ব্যবহৃত কণ্ঠটি পাকিস্তানের কোনো ব্যক্তির হয়ে থাকতে পারে।
অন্যদিকে, ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, “Rajasthan Assembly Elections: What is the reality of demolition of mosque in Jodhpur” শিরোনামে বিবিসির একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি মূলত ভারতের যোধপুরে একটি মসজিদ ভাঙার গুজবকে কেন্দ্র করে। প্রতিবেদনে তৎকালীন যোধপুর পুলিশ কমিশনার অলোক কুমার ভাসিস্তের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যে, যোধপুরে মসজিদ ভাঙার এমন কোনো ঘটনা ঘটে নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি খবর।
আবার একই প্রতিবেদনে ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিওর উল্লেখ করা হয়। যদিও বিবিসির ঐ প্রতিবেদনে ভিডিওটি “Unavailable” ছিলো। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউবের ঐ ভিডিওটি দাবি করছে যে মসজিদটি ভাটহাট নামক জায়গার। ভাটহাট হচ্ছে ভারতের গোরাখপুর জেলার একটি ব্লক। কিন্তু আফতাব আলম নামে বিএসপি (বাহুজান সমাজ পার্টি) নেতার ভাষ্যমতে, গত এক দশকে ভাটহাটের মসজিদের আকৃতিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। গৌরব দুবে নামে অন্য একজন সমাজকর্মী বক্তব্যটি নিশ্চিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক বড় করার কাজ চলছে। এই ভিডিওটি যেকোনো জায়গারই হতে পারে। গোরাখপুরে যখন সড়ক বড় করার কাজ চলছিলো তখন কিছু মন্দির এবং মসজিদ ধ্বংস হয়েছিলো। কিন্তু এর সবই হয়েছিলো সামাজিক সম্মতিতে। এ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিতর্ক সামনে আসেনি।”
বিবিসির এই প্রতিবেদন থেকে মসজিদের সঠিক অবস্থান জানা যায়নি, এবং এর পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানি নিশ্চিত করা যায় নি। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, ভিডিওটি ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ কিংবা তারও আগের। অর্থাৎ, এটি কমপক্ষে তিন বছর পুরনো।
উল্লেখ্য, বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে “জয় শ্রী রাম” স্লোগান সহ আরোও নানারকম শব্দ শোনা যায়। কিন্তু, ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে যে ইউটিউব ভিডিওটি পাওয়া যায় সেখানে কোনো স্লোগান শুনতে পাওয়া যায় না। আবার, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে উর্দু ভাষায় একটি বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে একটি বিষয় বুঝা যায় যে, একই ভিডিও একেক সময় একেক উদ্দেশ্যে ভাইরাল হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মসজিদ ভাঙার তিন বছর পুরনো এই ভিডিওর সাথে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য যুক্ত করে যে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। মূল ভিডিওতে সেরকম কোনো শ্লোগান কিংবা উস্কানিমূলক বক্তব্য ছিল না। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?