সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে আলাদাভাবে একটি শুঁয়োপোকা এবং একজন মৃত ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে সেই বিষাক্ত শুঁয়োপোকার কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ছবির মৃত ব্যক্তি গত বছর ভারতের মহারাষ্ট্রে বজ্রপাতে নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া ছবিতে প্রদর্শিত পোকাটি কাপ মথ ক্যাটারপিলার নামে পরিচিত যার বিষ মানবদেহের জন্য প্রাণনাশক নয়। একই পোস্ট গতবছর ভারতে ভাইরাল হয়েছিলো, যা ভারতীয় ফ্যাক্টচেকাররা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। প্রমাণসাপেক্ষে ফ্যাক্টওয়াচও এ পোস্টকে মিথ্যা আখ্যা দিচ্ছে।
মৃত ব্যক্তির ছবি থেকে ইমেজ সার্চ করে Aadhar News নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ আপলোড করা একটি ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিওতে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে আশপাশের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে ছবির মৃত ব্যক্তির পাশাপাশি আরেকজন মৃত ব্যক্তি রয়েছে এবং মারাঠি ধারাভাষ্যে বলা হচ্ছে চল্লিশগাঁওতে বজ্রপাতে বাবা ও ছেলে নিহত হয়েছে।
ইউটিউবের এ সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ধরে ইন্টারনেটে সন্ধান করে একই তারিখের দুটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে (এখানে, এখানে) যেখান থেকে জানা যায়, ভারতের মহারাষ্ট্রের চল্লিশগাঁও গ্রামে বজ্রপাতে একজন কৃষক ও তার পুত্রের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে একাধিক ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, আলোচ্য ভাইরাল পোস্টটি গতবছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় ভারতে ভাইরাল হয়েছিলো। AFP Fact Check, The Quint-এর মতো প্রখ্যাত ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা এ পোস্টকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। তারা দাবি করছে, ভাইরাল পোস্টে যে মৃত ব্যক্তির ছবি দেখা যাচ্ছে, তা মহারাষ্ট্রে বজ্রপাতে নিহত একজন কৃষক ও তার পুত্রের।
AFP Fact Check-এর রিপোর্ট বলছে, তারা ছবির পোকাটির ব্যাপারে প্রখ্যাত পতঙ্গবিশারদ ডঃ শশাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। ডঃ শশাঙ্ক জানিয়েছেন, এ পোকাটি কাপ মথ ক্যাটারপিলার (Cup Moth Caterpillar) নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত এ পোকার কামড়ে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায় নি। এ পোকার সংস্পর্শে আসলে বড়জোর ত্বকে জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং র্যাশ দেখা দিতে পারে।
The Quint-এর রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তারা পোকাটি সম্পর্কে জানতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের (ICAR) বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন নেটল কাপ মথ ক্যাটারপিলার নামক (Nettle Cup Moth Caterpillar ) এ শুঁয়োপোকাটি প্রাণনাশক নয়।
ভারতের এই ভাইরাল পোস্টের ব্যাপারে তেলেগুপোস্টের রিপোর্টও একই কথা বলছে।
ইন্টারনেটে নেটল কাপ মথ ক্যাটারপিলার সম্পর্কে সন্ধান করে ইউনিভার্সিটি অফ ফিলিপাইনের উদ্যোগ ‘Project Noah’-এর ওয়েবসাইটে এ পোকার যে ছবি পাওয়া যাচ্ছে তার সাথে ভাইরাল পোস্টের পোকাটির ছবি মিলে যাচ্ছে। পোকাটির বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, এ পোকায় যে বিষ রয়েছে মানবদেহে তার প্রতিক্রিয়া হালকা চুলকানি থেকে যন্ত্রণাদায়ক হুল ফোটানোর ব্যথার মতো হতে পারে। (প্রোজেক্ট নোয়াহ-এর কাজ মূলত বন্যপ্রাণী ও পতঙ্গ সম্পর্কিত ডকুমেন্টেশন।)
Australian Geographic-এর ওয়েবসাইট থেকে পোকাটি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে এর বিষের কারণে মৌমাছির হুল ফোটানোর মতো যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা অনুভব হতে পারে।
উল্লেখ্য, কোনো ওয়েবসাইটেই এই পোকাকে প্রাণনাশক বলা হচ্ছে না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল পোস্টের পোকাটি প্রাণনাশক এমন কোনো প্রমাণ নেই। ছবিতে থাকা মৃত ব্যক্তিবর্গ মূলত ভারতের মহারাষ্ট্রে বজ্রপাতে নিহত হয়েছিলেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।