এভারকেয়ার হাসপাতালে এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে?

22
এভারকেয়ার হাসপাতালে এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে? এভারকেয়ার হাসপাতালে এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে?

তুষার খান

Published on: [post_published]

যা ছড়িয়েছে: ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন।

যা পাওয়া যাচ্ছে: ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হননি। বাংলাদেশের অন্য কোনো স্থানে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যেহেতু ভাইরাসটির সাথে এভারকেয়ার হাসপাতালের নাম এসেছে তাই বিষয়টি জানতে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ফেসবুকে প্রচারিত দাবিটি গুজব এবং ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হননি।

মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কী: এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স আলাদা ধরনের একটি পক্স ভাইরাস। এমপক্সের প্রধানত দুইটি ধরন আছে, ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। দুইটি ধরনের মধ্যে আবার সাব ডিভিশন এ, বি রয়েছে। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল। পরবর্তীতে এটি মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

উৎপত্তি: পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এমপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। উক্ত অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় আর শত-শত মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা। উল্লেখ্য, আফ্রিকার কঙ্গো দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে ইউরোপের দেশ সুইডেনে এমপক্সের বিপজ্জনক একটি ধরনে আক্রান্ত হওয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটির জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা দেশটিতে এটিই প্রথম। আফ্রিকা এবং  ইউরোপের বাইরে রোগটি এশিয়া মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানে একজন ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। দেশটির স্বাস্থ্যসংস্থার দাবি, সৌদি আরব থেকে তিনি পাকিস্তানে এসেছেন।

 

রোগটি যেভাবে ছড়াতে পারে: এমপক্স ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে বন্যপ্রাণী থেকে, তাই এটি মূলত প্রাণীবাহিত রোগ। আগে যারা বন্যপ্রাণী শিকার করতে যেতেন তারা সংক্রমিত হতেন। কিন্তু বর্তমানে এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এমপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে মূলত শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে। এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তিকে র্স্পশ করা, চুমু দেওয়া কিংবা যৌন সম্পর্ক থেকে এটি ছড়াতে পারে। তাছাড়া আক্রান্ত  ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুব কাছাকাছি থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কোনো প্রাণী এমপক্স আক্রান্ত হয়েছে, এমন প্রাণী শিকার করা তা থেকে চামড়া তোলা, মাংস কাটা  ইত্যাদি কারণ থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। বলাই বাহুল্য, উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি  গেলেও আক্রান্ত  হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা পোশাক, তোয়ালে, বিছানার চাদর, যেকোনো ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করালেও এমপক্স হতে পারে।

এমপক্সের চিকিৎসা: এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই রোগের সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। তবে ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। যদিও পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ আছে। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে। ফুসকুড়ি বা ফোসকার ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ দিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। জলবসন্তের রোগীর মতো করে এমপক্সের রোগীর যত্ন নিতে হবে। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। যেহেতু এমপক্স ছোঁয়াচে একটি  রোগ তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভাইরাসটি আর না ছড়ায়।

উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালে এমপক্সের মৃদু ধরন ক্লেড ২’র কারণে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না, এমন প্রায় ১০০টি দেশেও এটি ছড়িয়ে পড়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলিকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কার্যত সাধারণ বসন্তের ভাইরাসের প্রতিষেধক দিয়েই এই রোগ ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা দ্বিতীয়বারের মতো রোগটির বিষয়ে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা করেছে। তাই বাংলাদেশের বিমানবন্দরেও ভাইরাসটি নিয়ে সতর্কতা জারি হয়েছে। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। এছাড়া এমপক্স সচেতনতায় হটলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সুতরাং এমপক্স ভাইরাস পৃথিবী ব্যাপী মহামারী ছড়াতে যাচ্ছে তা আমরা বলতে পারি। তবে বাংলাদেশে এখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে একজন এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.