একটি ফেসবুক পোস্ট দাবি করছে, পাপুয়া নিউ গিনিতে যারা ধূমপান করে তাদের মৃত্যুর পর এভাবে চেয়ারে বেঁধে রেখে দেয়া হয় এবং একসময় তারা মমিতে পরিণত হয়। এই প্রথাটিকে শাস্তি হিসেবেও তুলে ধরা হয় সেখানে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দাবিটি সত্য নয়। পাপুয়া নিউ গিনিতে এক বিশেষ ধরণের মমিফিকেশন বা মৃতদেহ সংরক্ষণের পদ্ধতি প্রচলিত আছে ঠিকই তবে এর সাথে ধূমপায়ী হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এই পদ্ধতিতে ধোঁয়া ব্যবহার করে মৃতদেহকে মমিতে পরিণত করা হয়। ছবিতে দেখানো মমিটি মইমাঙ্গ নামের এক ব্যক্তির, ১৯৫০ সালের শুরুতে তার মৃত্যুর পর দেহকে মমিতে রূপান্তরিত করা হয়। সম্মান দেখাতেই নির্দিষ্ট এই গোষ্ঠি তাদের পূর্বপুরুষদের মৃতদেহ মমিতে পরিণত করে। এটি কোনো শাস্তি নয়, বরং কাউকে সম্মান জানানোর একটি প্রথা।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ফেসবুক পোস্টে থাকা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, লাইভ সাইন্স এবং বিবিসি প্রকাশিত দুটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, এটি পাপুয়া নিউ গিনিতে অবস্থিত আংগা জাতিগোষ্ঠীর একটি আচার বা প্রথা। এটি তাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান দেখাতে মৃতদেহকে সংরক্ষণ করার একটি পদ্ধতি বা মমিফিকেশন। তবে এই গোষ্ঠীর মমিফিকেশন অনেকটাই ভিন্ন। এই প্রক্রিয়ায় ধোঁয়া ব্যবহার করে মৃতদেহকে মমিতে রূপান্তরিত করা হয়। একে তাদের ভাষায় “স্মোকড বডি” বলেন তারা।
২০০৮ এ এমনই একটি মমিকে সংস্কার করতে সেই গ্রামে যায় গবেষকদের একটি দল। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিয়ে পরবর্তীতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত করে তারা। দ্য এনাটমিকাল রেকর্ড নামে একটি জার্নালে ২২ মে, ২০১৫ এ এটি প্রকাশিত হয়। “Mummy Restoration Project Among the Anga of Papua New Guinea” শিরোনামের এই গবেষণা থেকে সম্প্রতি ভাইরাল এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
২০০৮ এ তোলা এই ছবিতে যে ব্যক্তির মৃতদেহের মমিটি দেখা যাচ্ছে তার নাম মইমাঙ্গ (Moimango)। মূলত এই মমিটি সংস্কার করার জন্যই গবেষক দলটি সেখানে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালের শুরুতে মইমাঙ্গ মারা গেলে পরবর্তীতে তাকে মমিতে পরিণত করা হয়। তিনি সেখানকার গ্রামনেতা ছিলেন। পাপুয়া নিউ গিনির এই জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তাদের মৃতদেহ মমি করার মাধ্যমে গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়।
মমি তৈরির এই প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে বুঝতে গবেষকদল সেখানকার জঙ্গল থেকে একটি শূকরের মমি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রক্রিয়ায় ধোঁয়াচ্ছন্ন একটি ঘরে কমপক্ষে ত্রিশদিন মৃতদেহটিকে রাখা হয়। লাইভ সাইন্সের একটি নিবন্ধ থেকে সম্পুর্ণ প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:
এই মমিফিকেশন নিয়ে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটি পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রের কোথাও এটি বলা হয় নি যে, ধূমপায়ীদের শাস্তিস্বরূপ এইভাবে চেয়ারে বেঁধে মমিফিকেশন করা হয়। বরং কোনো ব্যক্তির মমিফিকেশন তাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বেশ সম্মানের। এর সাথে ধূমপায়ী কিংবা অধূমপায়ীর কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় নি।
সুতরাং, সংগত কারণেই এমন মিথ্যা দাবি সম্পন্ন ফেসবুক পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?