শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার), ২৬ নভেম্বর ২০২৪ প্রথম এবং ২৬ নভেম্বর ২০২৪ দ্বিতীয় দফায় হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কবলে পরে। এই আবহে একটি মসজিদ ভাঙচুরের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটা শেরপুরের মুরশিদপুর দরবার শরীফের মসজিদে হামলার দৃশ্য। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, মসজিদটি ভারতের ত্রিপুরার কদমতলা বাজার এলাকায় অবস্থিত। মসজিদটি চলতি বছরের অক্টোবরে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যকার এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছিল। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় উক্ত ভাইরাল দাবিটি মিথ্যা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য শুরুতেই রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে রাহেল আলি নামের একটি ফেসবুক প্রফাইল থেকে ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিওতে একই মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় মসজিদটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলা বাজারে অবস্থিত এবং সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে Ayan v block Tripura নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিন্ন দিক থেকে ধারণ করা একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যা থেকে মসজিদটির প্রবেশমুখ দেখা যায়।
এরপরে, গুগল ম্যাপের সাহায্যে ত্রিপুরার কদমতলা বাজার এলাকার ২০২৩ সালের জুনের একটি স্ট্রিট ভিউ এর সাহায্যে ভাইরাল মসজিদটিও খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়, মসজিদের নাম ‘কদমতলা বাজার জামে মসজিদ’। এর মাধ্যমে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত মসজিদটি বাংলাদেশের কোনো মসজিদ নয়।
উল্লেখ্য, শেরপুরের মুরশিদপুর দরবার শরীফে ২৬ নভেম্বর ২০২৪ এ প্রথম দফায় হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৩ জন আহত হয়। এই আহতদের মধ্যে মো. হাফেজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি এর পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার মৃত্যুর জের ধরে দরবারে ২৮ নভেম্বর দ্বিতীও দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, ত্রিপুরার কদমতলায় দুর্গা পূজার জন্য জোরপূর্বক চাঁদা সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গত ৬ ও ৭ অক্টোবর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের শেরপুরের নয় বরং ভারতের ত্রিপুরার এবং এটি মুরশিদপুর দরবার শরীফে হামলা হওয়ার অনেক আগের।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh