ভারতে হোলি উৎসবে পাথর ছোঁড়ায় মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের দাবিটি ভুয়া

38
ভারতে হোলি উৎসবে পাথর ছোঁড়ায় মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের দাবিটি ভুয়া
ভারতে হোলি উৎসবে পাথর ছোঁড়ায় মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের দাবিটি ভুয়া

‘ভারতে এ বছরের হোলি উৎসবে হোলি খেলায় পাথর ছোঁড়ায় একজন মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ’ এমন দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটি ভারতের আহমেদাবাদের। খাবারের দোকান স্থাপনকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের দৃশ্য এটি। সংঘর্ষের সময় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত একজনকে পুলিশ লাঠিপেটা করছে। এ ঘটনায় জড়িত কেউই মুসলিম নয়।

“এই জিহাদী অসভ্য ভেবেছিল ভারতবর্ষ বর্তমানে জাতি ও দেশের শত্রু নিকৃষ্ট সিপিএম কিংবা কংগ্রেস এর সরকার চলছে। তাই বাংলাদেশ ভেবে আমেদাবাদে হোলি খেলায় পাথর মেরেছিল, তার পরিনাম হিসাবে দেশের বীর সন্তান তথা আমেদাবাদের পুলিশ প্রশাসন অসভ্য বর্বর জিহাদীকে একটু বুঝিয়ে দিয়েছেন এটা ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান নয়। জয় শ্রী রাম।” – এই ক্যাপশনে ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুজন ব্যক্তি আরেকজনকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে এবং পেছনে একাধিক পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

আলোচ্য ভিডিও থেকে বিভিন্ন কি-ফ্রেম নিয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদসংস্থা “Ahmedabad Mirror”-এর এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিওটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশিত হয়েছে ১৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে – “আহমেদাবাদের ভাস্ট্রালে সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং অভিযুক্তদের ভাইপুরার বাড়ি ভেঙে দিয়েছে।

একই তারিখে অপর একটি সংবাদসংস্থা “Navbharat Times”-এর এক্স হ্যান্ডেল থেকে আরেকটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আলোচ্য ভিডিওর ব্যক্তিকে একই স্থানে পুলিশের সামনে কান ধরে উঠবস করতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে – “গুজরাটের আহমেদাবাদে হোলিকা দহন-এর রাতে একদল যুবক রাস্তায় তাণ্ডব চালিয়ে ভাঙচুর করেছিল। এরপর পুলিশ ১৪ জন যুবককে গ্রেপ্তার করে। কিছু ভিডিওতে পুলিশকে অভিযুক্তদের ব্যাপকভাবে পিটাতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ‘হোলিকা দহন’  হলো হলির আগের দিন পালিত একটি অনুষ্ঠান।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “The Free Press Journal” থেকে ১৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনে যুক্ত ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে এটি একই ঘটনার। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আহমেদাবাদের ভাস্ট্রাল এলাকায় ১৩ মার্চ রাতে পথচারীদের ওপর হামলা এবং লাঠি ও তলোয়ার দিয়ে যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে অন্তত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে অভিযুক্তদের মারধর করতে দেখা যায়।

আরেকটি সংবাদমাধ্যম The Gujarat Samachar-এ জড়িত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ১৪ জনের নাম পাওয়া যাচ্ছে। ব্যক্তিরা হলেন – আলদীপ মৌর্য, শ্যাম কমলি, বিকাশ ওরফে বিট্টু পারিহার, আশিল মাকওয়ানা, রোহিত ওরফে দুর্লভ সোনাওয়ানে, নিখিল চৌহান, ময়ুর মারাঠি, প্রদীপ ওরফে মনু তিওয়ারি, রাজবীর সিং বিহোলা, অলকেশ যাদব, আয়ুষ রাজপুত, দীনেশ রাজপুত এবং দীপুশ।

প্রতিবেদনগুলোর কোথাও তাদের মুসলিম বলে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এ ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পর্কও পাওয়া যায়নি।

তাই ভুয়া দাবিতে অপপ্রচার চালানো এসব পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

Claim:
‘ভারতে এ বছরের হোলি উৎসবে হোলি খেলায় পাথর ছোঁড়ায় একজন মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ’ এমন দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh