যা দাবি করা হয়েছে:বাংলাদেশ নৌবাহিনী সোমালিয়ার জলদস্যুদের থেকে বাংলাদেশের ছিনতাই হওয়া নৌ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকালে দুজন জলদস্যুকে আটক করেছে এবং বাকি জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে।
যা পাওয়া যাচ্ছে:সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে এখনো জিম্মি রয়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আব্দুল্লাহ”। জলদস্যুদের কাছে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আব্দুল্লাহ” উদ্ধারে সোমালিয়ার পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা দ্রুত মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছে জাহাজটির কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কবে দস্যুদের কবল থেকে তারা মুক্তি পাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি কেএসআরএম জাহাজ কর্তৃপক্ষ। মূলত দস্যুদের সঙ্গে জাহাজ কর্তৃপক্ষ মুক্তিপণ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। যে কারণে দস্যুদের সাথে তারা আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া কোনো প্রকার সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ছিনতাই হওয়া নৌ জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করতে রাজি হয়নি জাহাজ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকার।
১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি দখলে নিয়ে সেখানে থাকা ২৩ বাংলাদেশি ক্রুকে জিম্মি করে দস্যুরা। জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। মূলত এ সময় জলদস্যুরা জাহাজের দখল নেয়। আরও বিস্তারিত জানতে পারবেনএখানে।
গুগলে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা হয়। সেখানে থেকে পাওয়া যায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে এখনো জিম্মি রয়েছে জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। তাছাড়া এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে যাওয়ার পর জিম্মি নাবিকদের ‘জোরপূর্বক’ উদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। মূলত নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রস্তাবটির ব্যাপারে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি। কেননা জাহাজে উদ্ধার অভিযান শুরু করলে তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। মৃত্যু ঝুঁকির মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে । বিস্তারিত জানতে পারবেনএখানে।
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা সংস্থাকেও বাংলাদেশ সরকার জাহাজ এমভি আব্দুল্লাতে কোনো প্রকার অভিযান চালাতে অনুমতি দেয়নি। সেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে জাহাজটি উদ্ধার করেছে এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বিবিসি বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সোমালিয়ান পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে এমভি আবদুল্লাহ এখন জিফলের উপকূলীয় এলাকায় আছে।
সেখানে জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পূর্বাঞ্চলে পুলিশ একটি অভিযান শুরু করেছে, যাতে দস্যুরা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়। এমভি আবদুল্লাতে থাকা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় নেই। জাহাজটিতে থাকা দস্যুদের জন্য মাদক সরবরাহের চেষ্টাকালে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে সোমালিয়ান পুলিশ।
অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টে যেখানে বলা হয়েছে দুইজন দস্যুকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এ দাবিটিও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী নয় বরং সোমালিয়ান পুলিশ দুজন দস্যুকে আটক করেছে।
প্রসঙ্গত, ৩০ মার্চ ২০২৪ তারিখে সংবাদ মাধ্যম কালের কণ্ঠ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, জাহাজ মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেছেন,“ক্যাপ্টেনসহ ২৩ নাবিককে জলদস্যুদের কাছ থেকে যত কম সময়ের মধ্যে মুক্ত করে আনা যায় আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। সমঝোতা প্রক্রিয়া দিন দিন উন্নতির দিকে বলা যায়। কিন্তু নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এ কারণে সব বিষয় জানানো সমীচীন হবে না”।
এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, জিম্মিদশা থেকে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের মুক্ত করতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে মালিকদের কথাবার্তা চলছে। মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ২৩ নাবিককে মুক্ত করার লক্ষ্যে সমঝোতার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
সুতরাং সকল তথ্য-উপাত্তের সাহায্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে বাংলাদেশি জাহাজটি উদ্ধার করেনি। সঙ্গত কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।