যা দাবি করা হচ্ছে: হিন্দুদের হয়ে কথা বলার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে একটি পরিবারকে গাড়ি থামিয়ে মারধোর করা হচ্ছে।
যা পাওয়া যাচ্ছে: ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ভালুকায় গ্রীন অরণ্য পার্ক নামের একটি বিনোদন কেন্দ্রে হামলার শিকার হয়েছিল এক দর্শনার্থী পরিবার । পুরনো এই হামলার ভিডিওটাই বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক দাবিতে ভাইরাল হয়েছে।
যারা হিন্দুদের হয়ে কথা বলবে তাদের সাথে এমনই হবে । দিনের বেলায় ও ছাড় নেই।
ভবিষ্যতে এরকম টাই হবে
৪ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুসহ একটি পরিবার একটি গাড়ির ভিতরে আটকা পড়ে আছেন, এবং গাড়ির চতুর্দিক থেকে উত্তেজিত জনতা গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করছেন ।
অনুসন্ধান
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এই ভিডিওর বিভিন্ন অংশ কয়েকটি টেলিভিশন প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে,এখানে,এখানে।
এসব প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ময়মনসিংহে গ্রীন অরণ্য পার্কের স্টাফদের হামলার শিকার পার্কের দর্শনার্থী।
সে সময়ের বেশ কিছু সংবাদপত্রেও এই ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছিল। এমন দুটি প্রতিবেদন দেখতে পাবেন দৈনিক যুগান্তর এবং কালবেলাতে।
দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা ক্যাবল ব্যবসায়ী শাহজাহান তার ৪ বছরের শিশুকন্যা আফরা, স্ত্রী ফাতেমা আক্তার নিশি, তিন সহোদরা হাফিজা, জহুরা খাতুন, তাছনিম, ভাগ্নি সুমাইয়া ও আজমিনাকে নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি হবিরবাড়ি এলাকার গ্রীণ অরণ্য পার্কে বেড়াতে আসেন। পার্কে থাকা সুইং রাইডে চড়ার জন্য ৫টি টিকিট সংগ্রহ করেন।
সুইং রাইডে অব্যবস্থাপনা থাকায় তিনি প্রতিবাদ করলে সুইং রাইডের অপারেটর মুনসূর আলী দর্শনার্থী শাহজাহানের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিবারের সামনেই তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। তখন শাহজাহান প্রতিবাদ করলে হঠাৎ করে সুইং রাইড অপারেটর জোরে তার গালে চড়থাপ্পড় মারতে থাকলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে শাহজাহান তার প্রাইভেটকার নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হলে পার্কের ম্যানেজার মো. হাসান চৌধুরী সাগরের নেতৃত্বে পার্কের অন্যান্য কর্মচারীরা প্রাইভেটকারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পাশ থেকে শাহজাহানের বোন পুরো ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করেন। এতে হামলাকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলাকারীরা বারবার চেষ্টা করছে প্রাইভেটকারের দরজা খোলার জন্য। দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়ে হামলাকারীরা গাড়ির গ্লাস ও দরজা ভাঙার চেষ্টা চালায়। এসব ঘটনা দেখে গাড়িতে থাকা শিশু ও নারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চিৎকার শুরু করে।
এ সময় পার্ক মালিক হাজী শহিদুল ইসলাম এসে পার্কের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরিয়ে নিয়ে যান। এক ফাঁকে শাহজাহান ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হন।
……ভুক্তভোগী শাহজাহান বলেন, ভালুকা পার্কে বেড়াতে এসে সপরিবারে বেইজ্জতি হয়েছি। পার্কের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি করে।
গ্রীণ অরণ্য পার্কের মালিক হাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পার্কটি চালু হওয়ার পর গাজীপুরের পার্ক ও রিসোর্ট ব্যবসায় ধস নামায় ওই সব পার্কের মালিকরা পরিকল্পিতভাবে শাহজাহানকে দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ জানান, আলোচিত এ মামলাটি এসআই আমিনুল ইসলাম তদন্ত করে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকি সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পার্কের পক্ষ থেকে যে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে সেটির পক্ষে কোনো ভিডিও ফুটেজ অথবা সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।
দেখা যাচ্ছে, এখানে ভুক্তভোগীদের নাম শাহজাহান, আফরা, ফাতেমা, জহুরা,সুমাইয়া ইত্যাদি অর্থাৎ প্রত্যেকটাই আরবি নাম, যা বাংলাদেশে সাধারণভাবে মুসলিম পরিচয় নির্দেশ করে। অর্থাৎ এই পরিবারটি মুসলিম।
এছাড়া, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দাবি অনুযায়ী, তারা ‘হিন্দুদের হয়ে’ কথা বলার জন্য এমন হেনস্থার শিকার হয়নি, বরং পার্কের একটি রাইডের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভুল দাবিযুক্ত এই সকল ফেসবুক পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার বেশ কিছু হামলার গুজব ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এ সকল গুজব নিয়ে দেখতে পারেন ফ্যাক্টওয়াচের এই বিশেষ সংকলন- বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার ভুয়া তথ্য
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।