‘নতুন পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম ভুল’ – এমন একটি পোস্ট সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পোস্টে দাবি করা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমানের নামের ‘শেখ’ অংশটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লুৎফর রহমান লেখা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাবার পেশা অফিসের কেরানি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু আসলে তিনি সেরেস্তাদার ছিলেন। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম প্রথমবার উল্লেখ করার সময় ঠিকই শেখ লুৎফর রহমান লেখা হয়েছে, পরবর্তী বারগুলোয় সংক্ষেপে লুৎফর রহমান লেখা হয়েছে। এছাড়া বইতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা পেশায় কেরানি ছিলেন, তৎকালীন অফিস-আদালতের ভাষায় তাকে সেরেস্তাদার বলা হতো। তাই এ দুটো দাবি ভিত্তিহীন হওয়ায় ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।
গুজবের উৎস
২২ জানুয়ারি পোস্টটি প্রথম ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। মূলত টিভি চ্যানেল Channel 24-এর একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে পোস্টটি করা হয়েছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় ছেলেবেলার মুজিব শিরোনামের প্রবন্ধতে বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমানের নামের ‘শেখ’ অংশটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লুৎফর রহমান লেখা হয়েছে। এভাবে পাঠ্যবইতে বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম ভুল লেখা হয়েছে। আরেকটি দাবি হলো, বইটির একই পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান সরকারি অফিসের কেরানি ছিলেন। কিন্তু তিনি আসলে সরকারি অফিসের কেরানি নয়, সেরেস্তাদার ছিলেন। কেরানি শব্দটি তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার করা হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণীর উক্ত বইটি পর্যালোচনা করে দেখা গেল, ৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম শুধুমাত্র লুৎফর রহমান লেখা হলেও এর আগের পৃষ্ঠায় (পৃষ্ঠা ৬) বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম প্রথমবার উল্লেখ করার সময় শেখ লুৎফর রহমান লেখা হয়েছে। তাই দ্বিতীয়বার শেখ নামটি যুক্ত না করায় বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম ভুল লেখা হয়েছে এ দাবিটি সত্যতা থাকছে না।
বইয়ের ৭ নাম্বার পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে – ‘ এখানে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ শেষ করার পরে বাবা তাকে নিয়ে আসেন গোপালগঞ্জ শহরে, নিজের কাছে রেখে পড়াবেন। বলা হয় নি বুঝি, বাবা লুৎফর রহমান এখানে সরকারি অফিসে কেরানি। বলা হয় সেরেস্তাদার – ফার্সি শব্দ। এক কালে ফার্সি ছিল রাষ্ট্রভাষা – মানে সরকারের অফিস-আদালতের ভাষা।’
একই পৃষ্ঠার শেষ প্যারায় বলা হয়েছে – ‘ ১৯৩৬ সালে আবার স্কুলে ফেরা। এবারে মাদারীপুর হাইস্কুলে, কারণ ততদিনে বাবা লুৎফর রহমান বদলি হয়ে গেছেন মাদারীপুরে। এখানেও তিনি সেরেস্তাদার অর্থাৎ আদালতের প্রধান কেরানি।’
স্পষ্টতই এখানে বোঝানো হচ্ছে যে, ফার্সি সেরেস্তাদার শব্দের বাংলা অর্থ কেরানি। তখন অফিস-আদালতে একজন কেরানিকে সেরেস্তাদার বলে সম্বোধন করা হতো। অর্থাৎ কেরানি এবং সেরেস্তাদার দুটো আলাদা নয়, বরং একই পেশা। তাই এ বইতে বঙ্গবন্ধুর বাবার পেশা ভুল লেখা হয়েছে এ দাবিটিও মিথ্যা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পাঠ্যবইতে বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম এবং পেশা এ দুটি ভুল থাকার দাবির কোনো সত্যতা নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় পোস্টটি বিভ্রান্তিকর।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?