১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে।“ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশের একাধিক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম। তবে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ঠিকাদার, উপজেলা প্রকৌশলী, এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, ধসে পড়ার বিষয়টি সত্য নয়। কাজটিতে কিছু অসঙ্গতি থাকায় এবং কাউকে না জানিয়ে ঠিকাদার কাজটি করায় তা অপসারণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের একটি সংবাদ সূত্রে জানা যায়, “নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। নিচতলা থেকে তিনতলা করতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৯ লাখ টাকা। জমির-জুলিয়া ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণ কাজটি করছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। গত ২২ আগস্ট হঠাৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাউকে না জানিয়ে স্কুল ভবনের চিলেকোঠার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার দাস ঢালাই কাজ নিয়ে আপত্তি জানান। পরে কাজ বন্ধ রাখার জন্য তিনি মৌখিকভাবে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন।“
কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানোর পর এক চিঠির মাধ্যমে ২৪ আগস্ট ঠিকাদারকে তৃতীয় তলায় নির্মাণাধীন চিলেকোঠার ছাদ অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়।
নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোরের একটি সংবাদের বরাতে জানা গেছে, ঐ ছাদ ঢালাইয়ের সময় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীকে না জানানো এবং আরো কিছু অসঙ্গতি থাকায় তা ভেঙে ফেলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়। ২৪ আগস্ট উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাঠানো সেই চিঠির একটি অনুলিপি নিউজবাংলা পেয়েছে।
চিঠিটি থেকে জানা যায়, “চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় নাসিরনগরের ওই বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের চুক্তির কাজ চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি শেষ হয়। তবে বিদ্যালয়ের চিলিকোঠার ছাদ কারিগরি কর্মকর্তাদের না জানিয়েই নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান“।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, “ঠিকাদার কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ নির্মাণ কাজ শুরু করে। পরে এ নিয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে অবগত করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারকে চিঠি দেন এবং চিলেকোঠার ছাদ অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকাদার স্বেচ্ছায় ছাদটি অপসারণ করেন। তবে ধসে পড়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না।“
এ বিষয়ে ঠিকাদার জমির উদ্দিন আহমেদ নিক্সন বলেন, “আমি প্রকৌশল অফিসের কাউকে না জানিয়ে ছাদ ঢালাই করেছিলাম সত্য। কারণ সম্প্রতি আমার পিতা মারা গেছেন। পিতার মৃত্যুর কারণে আমি অনেকটা ভেঙে পড়েছি। আমার ঠিকাদারি কাজে সাইটের খবর নিতে পারিনি। তাই শ্রমিকরা কাজটি করে ফেলেছিলেন। তবে উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে ছাদটি ভেঙে নতুনভাবে করার জন্য গত ২৪ আগস্ট আমাকে একটি চিঠি দেয়। পরে চিঠির আলোকে আজ সকাল থেকেই নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেই। এখানে ধসে পড়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এটি গুজব ছড়ানো হয়েছে।“
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল বলেন, “কাউকে না জানিয়ে ঠিকাদার স্কুলটির তৃতীয় তলার কাজ হঠাৎ শুরু করে। কাজের মান নিয়ে এবং কাউকে না জানিয়ে কাজ শুরু করায় তাকে গত ২৪ আগস্ট নির্মাণাধীন কাজের অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকাদার অপসারণ করে নেয়। আজ সকাল থেকে অপসারণ কাজ শুরু করে। তবে ধসে পড়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।“
বিষয়টি সম্পর্কে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হালিমা খাতুন বলেন, “আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ছাদটি ভেঙে নতুনভাবে করতে ঠিকাদারকে উপজেলা প্রকৌশলী চিঠি দিয়েছেন। ঠিকাদার অপসারণের কাজ করেছে। তবে ধসে পড়ার বিষয়টি গুজব।“
এ বিষয়ে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ম না মানায় ভাঙতে হলো বিদ্যালয়ের ছাদ” শিরোনামে কালেরকন্ঠের একটি সংবাদ পড়ুন এখানে।
দেখা যাচ্ছে, বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ঠিকাদার, উপজেলা প্রকৌশলী, এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী ধসে পড়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া ভেঙে ফেলার বিষয়ে সরকারি নির্দেশের চিঠিও প্রমাণ করে, বিদ্যালয়টির ছাদ ভেঙে ফেলা হয়েছে, ধসে পড়ে নি। সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ “ধসে পড়ল বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ” শীর্ষক উক্ত সংবাদগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?