বাংলাদেশ কি ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে?

13
বাংলাদেশ কি ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে? বাংলাদেশ কি ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে?

Published on: [post_published]

“এবার মিয়ানমার ও ভারতকে কাঁদিয়ে ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ”– এমন শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওতে অনেক অপ্রাসঙ্গিক তথ্য যুক্ত করা হয়েছে যার সঙ্গে শিরোনামের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়না। তাছাড়া, ন্যাটোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বাংলাদেশ ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে কি না এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:  

বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ন্যাটোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) হচ্ছে একটি রাজনৈতিক এবং সামরিক জোট যা ৩০ টি স্বাধীন সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত। এই দেশগুলোর মধ্যে ২৮ টি ইউরোপিয় এবং ২ টি উত্তর আমেরিকান দেশ রয়েছে। ন্যাটো “নর্থ আটলান্টিক অ্যালায়েন্স” নামেও পরিচিত। এই ৩০ টি দেশের বাইরে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আরও ৫ টি রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। দেশগুলো হচ্ছেঃ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সুইডেন এবং ইউক্রেন। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন শিঘ্রই ন্যাটোতে প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে কি না এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা ন্যাটো এখনও দেয়নি।

পাশাপাশি, সদস্যদেশগুলোর বাইরেও আরও ৯ টি দেশ রয়েছে যারা ন্যাটোর পার্টনার। দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, ইরাক, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান। এই তালিকায়ও বাংলাদেশের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, ন্যাটোর সাথে বাংলাদেশের এমন কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা বলা সম্ভব যে বাংলাদেশ ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বাংলাদেশ ন্যাটোতে যোগদান করতে যাচ্ছে কি না এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি বরং অপ্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। যেমন, স্নায়ুযুদ্ধ কি, আমেরিকা এবং সোভিয়ত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযদ্ধ, আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ, চীনের প্রস্তাবিত ন্যাটোর বিকল্প সামরিক জোট গ্লোবাল সিকিউরিটি অর্ডার ইত্যাদি। ভিডিওতে তথ্যপ্রমাণহীন ভাবে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ “ন্যাটো” এবং “গ্লোবাল সিকিউরিটি অর্ডার” এর মধ্যে যে কোনো একটি জোটে যোগদান করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভিডিওর ২ মিনিটের সময় চীনের প্রস্তাবিত এই সামরিক জোটের সাথে বাংলাদেশের যোগদান করার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যম থেকে কেবল জানা যায়, গত ৭ আগস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের বৈঠক হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেয়ার সময় এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, “বৈঠকে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই), বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বা নতুন চীনা ঋণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি”। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

উল্লেখ্য, রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২১ এপ্রিল গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যদিও এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।

সর্বোপরি, মূলধারার দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয় নি। সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.