এনডিটিভির বিকৃত ফটোকার্ডে বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার্স আক্রমণের গুজব

219
এনডিটিভির বিকৃত ফটোকার্ডে বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার্স আক্রমণের গুজব
এনডিটিভির বিকৃত ফটোকার্ডে বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার্স আক্রমণের গুজব

Published on: [post_published]

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি এক্সবার্তার স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত অঙ্গরাজ্যসমূহ দখল করার হুমকি দেওয়ার পরে নতুন দিল্লী জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক আহবান করেছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে,এনডিটিভি তাদের ভেরিফাইড এক্স একাউন্ট থেকে এমন কোনো এক্স (টুইট) পোস্ট করেনি । বাংলাদেশ এর বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারত সরকার গত ৬ই আগস্ট একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেছিল,তবে ১২ বা ১৩ই আগস্ট নতুন করে এমন এমন বৈঠক আহবান করা হয়নি।

গুজবের উৎস

থ্রেডসে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

বেলা বোস নামক পেজ থেকে শেয়ার করা এই পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, এমন ম্যাপ আঁকবেন যেনো পাশের দেশে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।😂

আর্টিস্ট এর প্রতি আর হাসাহাসি করবো না

মূল পোস্টে ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভি এর ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) পেজের একটি স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে, যেখানে এনডিটিভির খবরের শিরোনাম -New Delhi calls for emergency meeting as BD plans on invading seven sisters ( বাংলাদেশের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো দখল করার পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে নয়া ডিলই জরুরী বৈঠক ডেকেছে) । এই সংবাদ শিরোনামের সাথে হ্যাশট্যাগ NDTVworld এবং একটি প্রতিবেদনের আংশিক লিংক দেখা যায়।

এছাড়া, এনডিটিভির এই খবরের সাথে জনৈক সাদমান শাফিন (shadman Shafin) এর পোস্ট করা দুইটি ছবি রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের দুইটি বিকৃত মানচিত্র দেখা যাচ্ছে।

একই ধরনের ভিন্ন কয়েকটি পোস্টে দেখা যাচ্ছে,এনডিটিভি সেখানে সাদমান শাফিন এর বাংলায় লেখা একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছে, যেখানে তিনি লিখেছেন, ডাকাত-ফাকাত ধরতে পারব না। সেভেন সিস্টারস দখল করতে হইলে জানাইয়েন। ইংরেজিভাষী এনডিটিভি কেন বাংলা ভাষায় লেখা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট প্রচার করবে, সেটা বোধগম্য নয়।

অনুসন্ধান

এনডিটিভি’র এক্স পোস্ট এর স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, ৯ই আগস্ট ২০২৪ তারিখ রাত ১১ টা ২৪ মিনিটে এই পোস্ট করা হয়েছিল।

বিষয়টা খতিয়ে দেখার অন্য এনডিটিভির ভেরিফাইড এক্স  একাউন্টে গিয়ে দেখা গেল, ৯ই আগস্ট রাত ১১টা ২৪  মিনিটে ২টি পোস্ট করা হয়েছিল। একটি পোস্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জনাব সালমান খুরশিদ (ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী) এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে ঝাড়খন্ডের মন্ত্রীর মামলা করার খবর দেওয়া হয়েছে।


আরেক পোস্টে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সড়কে শৃংখলা নিয়ন্ত্রনের খবর দেওয়া হয়েছে।

এই দ্বিতীয় পোস্টে দৃশ্যমান আংশিক লিংকের সাথে আলোচ্য ভাইরাল পোস্টের লিংক পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে (ndtv.com/world-news/ban…)

পোস্টটি কতবার দেখা হয়েছে, সেই পরিমাপক সংখ্যা, অর্থাৎ মোট ভিউজ এ অবশ্য গরমিল রয়েছে (৪২৬৮ বনাম ১৩৯৩)। ধরে নেওয়া যায় যে গুজব রটনাকারীর স্ক্রিনশট ট্রাফিকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছাত্রদের ছবিটি সরিয়ে সেখানে সাদমান শাফিনের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এনডিটিভি’র এই ভুয়া স্ক্রিনশটে যে দাবি করা হয়েছে (নয়া দিল্লীর সরকার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জরুরী বৈঠক ডেকেছে কিনা) , সেটা খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ই আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরে ৬ই আগস্ট তারিখে একটি সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। এরপরে, এই এক্স পোস্টের তারিখ অনুযায়ী ১১,১২ বা ১২ই আগস্ট তারিখে এমন কোনো সভা আহবান করা হয়নি।

গত ৬ই আগস্ট এনডিটিভি’র সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করলে তা বাংলাদেশের বাইরে মিয়ানমার ,পশ্চিমবঙ্গ ও  সেভেন সিস্টার্সেও ছড়াবে ( If you destabilise Bangladesh, it will spill over all around Bangladesh, including Myanmar and seven sisters in West Bengal everywhere)

এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্য , (যা একত্রে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত) কে নিয়ে অনেক গুজব ডালপালা মেলা শুরু করে। ড ইউনুসের বক্তব্য বিকৃত করে ‘ভারতের সেভেন সিস্টারসের অস্তিত্ব থাকবে না’ এমন একতি বক্তব্যও অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেন। ভারতের আজতক বাংলা ফ্যাক্টচেক বিভাগ এই বক্তব্যটি গুজব হিসেবে সনাক্ত করেছে।

অন্যদিকে, ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অনেক শিক্ষার্থী শহরের দেয়ালগুলোতে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান সম্পর্কিত বিভিন্ন দেয়াল-চিত্র আঁকা শুরু করে। অপটু হাতে আঁকানো অনেকের দেয়াল চিত্র কিছুটা হ্যস্যরসের জন্ম দিয়েছে ,যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।

বাংলাদেশের একটা বিকৃত মানচিত্রের মধ্যে ভারতের সেভেন সিস্টার্স হিসেবে খ্যাত অঙ্গরাজ্যগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ এমন দাবি করছেন। তবে এই দেয়ালচিত্রের অবস্থান,বা মানচিত্র শিল্পীর ভাবনা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়া, ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর সাথে এই মানচিত্রেরও মিল খুব সামান্য।

                                    ছবি :The Financial Express এর সৌজন্যে

সার্বিক বিবেচনায় ভারতের এনডিটিভির বিকৃত স্ক্রিনশটসহ পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা/বিকৃত’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।


এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.