যা দাবি করা হচ্ছে : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকাদের অশালীন চলাফেরা নিয়ে সতর্কীকরণ নোটিশ প্রকাশ করেছে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ নামক সংগঠন। এই নোটিশে উপজাতিসহ সকল ধর্মের শিক্ষিকাদের যথাযথ পর্দাসহ বোরখা-হিজাব-নিকাব পরে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যা পাওয়া যাচ্ছে : ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এই বিবৃতিটি দেয়নি। সংগঠনের আহবায়ক জনাব মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত এই সতর্কীকরন নোটিশ বা বিবৃতিকে মিথ্যা হিসেবে সনাক্ত করেছে।
এই প্রেস রিলিজের শিরোনাম ছিল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশালীন চলাফেরাকারী শিক্ষিকাদের সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করল শিক্ষার্থীরা
অনুসন্ধান
গত ২২শে আগস্ট থেকে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ নামক সংগঠনটির কথা জানা যাচ্ছে। এর আগে এই সংগঠনের কোনো কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়নি। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ এ গত ২২শে আগস্ট তারিখে প্রকাশিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব বিরোধী ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিরোধী ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে `অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ নামক একটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও তালিকাটি প্রকাশ করেন তারা।
এছাড়া, ২৪শে আগস্ট তারিখ থেকে এই ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ এর নাম যুক্ত একটি প্রেস রিলিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এই প্রেস রিলিজ এর শিরোনাম ছিল- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব বিরোধী ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ । প্রেস রিলিজ এর শেষে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ এর পক্ষ থেকে ২ জন সংগঠকের নাম-পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সচেতন এর আহবায়ক মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত, এবং সদস্য সচিব মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার।
ফেসবুকে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ নামে একটি আনভেরিফাইড ফেসবুক পেজও দেখা যাচ্ছে। এই পেজটি খোলা হয়েছে ২৫শে আগস্ট রাত ২টা ৫২ মিনিটে। অর্থাৎ, ২২শে আগস্ট তারিখে ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশের সময়ে এই পেজের অস্তিত্ত্ব ছিল না।
এই অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ এর আহবায়ক ‘মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত’ এর একটি আনভেরিফাইড ফেসবুক আইডি খুজে পাওয়া যাচ্ছে। ২২শে আগস্ট রাত ১১টা ১৬ মিনিটে এই আইডি থেকে মুহিউদ্দিন রাহাত ১০০ শিক্ষকের তালিকাসহ সেদিনের প্রেস রিলিজটি সম্পূর্ণ আপলোড করেছিলেন।
এই ‘মুহিউদ্দিন রাহাত’ একাউন্ট থেকে ২৫শে আগস্ট রাত ১২টা ৫০ মিনিটের একটি পোস্ট থেকে জানানো হয়, আমার এবং ছোটভাই Mohammed Yaqub Ahmed এর নাম ব্যবহার করে কোনো এক দুষ্টচক্র একটা মিথ্যা বিবৃতি বানিয়ে ছড়াচ্ছে। আমি এশিউর করছি এই বিবৃতি আমাদের দেওয়া না।
সুতরাং জেনে বা না জেনে যারা ওটা ছড়াচ্ছেন, উসকানিমূলক কথা বলছেন, গালাগাল করছেন; এর সম্পূর্ণ দায় আপনাদেরকেই নিতে হবে।
অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ নামক সদ্য প্রকাশিত পেজ থেকেও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিবৃতিটাকে গুজব হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৫শে আগস্ট রাত ৩টা ৩৯ মিনিতে প্রকাশিত একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ” ব্যানারে গত ২২ আগস্ট যে প্রেস রিলিজ প্রকাশিত হয়েছে (কমেন্টে দেখুন), যেখানে আমরা সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হি*জা*ব পরায় বৈ*ষম্যের স্বীকার ও নির্যা*তিত হওয়া শিক্ষার্থী বোনদের পক্ষে কথা বলেছি, হি*জা*ববিদ্বেষী নি*পী*ড়নকারী ১০০ জন শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেছি।
উক্ত বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতেও এসেছে। এর বাইরে অন্যকোনো প্রেস রিলিজ আমরা প্রকাশ করিনি। এই প্রেস রিলিজের বাইরে অন্য কোনো প্রেস রিলিজ অনলাইনে ছড়িয়ে থাকলে সেগুলো ফেইক এবং গু*জব।
এই গু*জব ছড়িয়ে এক বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের চিরাচরিত “ডি*ভাইড & রুল” পলিসিতে খেলার জন্য নেমেছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সবার এক থাকার সময়, বিভেদের নয়। তাই গু*জবে বিশ্বাস না করে জাতীয় ও সা*ম্প্র*দায়িক ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে সচেতন থাকার জন্যে সবাইকে অনুরোধ করছি।
আমাদের প্রকাশিত প্রেস রিলিজের মিডিয়ায় আসা কয়েকটি লিংক কমেন্টবক্সে শেয়ার করছি।
সিদ্ধান্ত
সার্বিক বিবেচনায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশালীন চলাফেরাকারী শিক্ষিকাদের সতর্কীকরণ নোটিশ গুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সনাক্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।