সামাজিক মাধ্যমে এই মর্মে একটি সংবাদ প্রচার হচ্ছে, নতুন করে ৮ পুলিশ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ। পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরাও! তবে এমন দাবির সপক্ষে কোথাও কোনো তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের উপরে বা সে দেশের কোনো নাগরিকের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। অতীতে ছয়জন র্যাব কর্মকর্তার উপরে নিষেধাজ্ঞার সময়ে এমনটি দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের কোনো পুলিশ কর্মকর্তার উপরে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি এন্টনি জে ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন একটি ভিসা পলিসি প্রকাশ করেছেন। এই পলিসিতেও নতুনভাবে কোনো নাম উল্লেখ করা হয় নি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি ডোনাল্ড লু নিশ্চিত করেছেন যে, উক্ত পলিসির আওতায় এখনো কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার এই সাম্প্রতিক দাবিগুলোকে সত্য বলার সুযোগ নেই।
সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যে দাবিগুলো করা হয়েছে, সে বিষয়ে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম কি বলেছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন একটি গুঞ্জন রয়েছে। আরও বিস্তর অনুসন্ধান করে “কালবেলা” পত্রিকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনামে বলা হয়েছে, আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে, প্রস্তুত সরকার। বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের ওপর আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে। মানবাধিকার ইস্যু ছাড়াও গণতন্ত্র খর্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর চলতি মাসেই নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করা হচ্ছে”। এই প্রতিবেদনটিতে কতজনের উপরে নিষেধাজ্ঞা, কারা আছেন সে তালিকায় — সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
অপরদিকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, নতুন করে ৮ পুলিশ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো। সেখানে বর্তমান ও সাবেক একাধিক পুলিশ অফিসারের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। যে কারণে ফ্যাক্টওয়াচ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে দেখে। তবে সেখানেও বাংলাদেশকে নিয়ে এমন কিছু উল্লেখ নেই যা দেখে বোঝা যায়, বাংলাদেশের কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন কিনা। তবে, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে “গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার” অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে পুনরায় অনুসন্ধানে আমেরিকার বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। “Announcement of Visa Policy to Promote Democratic Elections in Bangladesh” শিরোনামে ২৪ মে ২০২৩ এ প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিতে নতুন ভিসা পলিসির কথা বলা হচ্ছে। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি এন্টনি ব্লিনকেন এই প্রসঙ্গে বলেন, “আজ, আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা 212(a)(3)(C) (“3C”) এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করতে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩ মে, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়”। তবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত এই বক্তব্যে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার নামের উল্লেখ নেই।
তবে এই পলিসি কারও উপর কার্যকর হয়েছে কি না তা জানার অনুসন্ধান করা হলে, দেশটির সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ার অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এর একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যানেল আই কে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নতুন পলিসির আওতায় এখনো কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি। এছাড়া তিনি আরও বলেন, এটি একটি “ফরোয়ার্ড লুকিং” পলিসি এবং অতীতের কোনো ঘটনার উপর ভিত্তি করে এই পলিসি কার্যকরের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
অর্থ্যাৎ, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে এই পলিসির আওতায় এখন পর্যন্ত কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি। এছাড়া আমেরিকা বা বাংলাদেশের তরফ থেকে এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয় নি যেখানে উল্লেখিত এই পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে “গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার” অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সুতরাং, স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে উল্লেখিত দাবিগুলো করা হয়েছে তাকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
নোটঃ নতুন তথ্যের আলোকে এই প্রতিবেদনটিতে কিছু বদল আনা হয়েছে। কিন্তু রেটিং অক্ষুণ্ণ আছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?