সম্প্রতি মিয়ানমারে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে একটি খবর চাউর হয়েছে যে, ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং উক্ত রুটে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু, সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিকল্প দুটো রুট, অর্থাত্ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার রুটে জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশী ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়গুলো তাদের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে “অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা” – এই মর্মে প্রকাশিত সংবাদের দাবিটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখেছি। আমাদের অনুসন্ধানে বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার, এবং প্রথম আলো কর্তৃক প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদগুলোতে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আদনান চৌধুরীর বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে যে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। এর আগে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে দেশটির বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। মূলত একটি নির্দিষ্ট রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে দাবি করে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন এবং টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আদনান চৌধুরীর সাথে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। তাঁরা রিউমার স্ক্যানারকে জানিয়েছে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
অতএব, অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে – এই তথ্যটি সঠিক নয়। বরং টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে বিকল্প দুটো রুটে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ করতে পারবেন।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এইধরণের সংবাদের দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।