যা দাবি করা হচ্ছেঃ কোটা (সংস্কার) আন্দোলনের ৬ নেতার হোটেল রুম থেকে ৪৫ লাখ টাকা ও ৯ টি অস্ত্র উদ্ধার।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়ককে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। গত ২৬,২৭ ও ২৮শে জুলাই পৃথক স্থান থেকে ডিবি তাদেরকে নিজেদের হেফাজতে তুলে নেয়। তবে এসময় তাদের সঙ্গে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা নগদ অর্থ উদ্ধারের কথা ডিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
এসব পোস্টে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়া বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের ৬ নেতার হোটেল রুম থেকে ৪৫ লাখ টাকা ও ৯ টি দেশী অস্ত্র সহ আটক
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
দৈনিক প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ জুলাই প্রকাশিত নাহিদসহ তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং নাহিদসহ ৩ সমন্বয়ক হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। —
একদল ব্যক্তি সাদাপোশাকে শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডির ওই হাসপাতাল থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান। ——পরে রাতে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে।
অন্যদিকে,২৭শে জুলাই প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁরা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় সারজিস ও হাসনাতকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জুনায়েদ আলম সরকার। রাত পৌনে নয়টার দিকে তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় সারজিস ও হাসনাতকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এই দুজনকেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দিতে ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে তথ্য জানতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, রবিবার,২৮শে জুলাই তারিখে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অপর একজন সমন্বয়ক, নুসরাত তাবাসসুম কে হেফাজতে নেওয়ার তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। প্রথম আলো’র এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে রবিবার ভোরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়।
লক্ষনীয় যে, এই ৩ টি ঘটনায় ৬ জন সমন্বয়কের ক্ষেত্রে, ডিবির পক্ষ থেকে কোথাও ‘আটক’ করার কথা বলা হয়নি, বরং “নিরাপত্তা হেফাজতে” নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে “হেফাজতে” নেওয়ার কথা জানানো হলেও, নির্দিষ্ট কোনো হোটেল বা রুমের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অধিকন্তু, দেশীয় অস্ত্র বা নগদ টাকা প্রাপ্তির দাবিও করা হয়নি।
সাধারণত অস্ত্র,টাকা বা মাদক উদ্ধারের ঘটনায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধারকৃত আলামতসহ আটককৃতদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। কিন্তু এই ৬ সমন্বয়কের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়নি।
সর্বশেষ গত রবিবার ২৮শে জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ছয়জন সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা এই ভিডিও বার্তা রবিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এই বার্তার সাথে ডিবির পক্ষ থেকে কোনো অস্ত্র বা টাকা উদ্ধারের তথ্য সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়নি।
রবিবার ২৮শে জুলাই রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এর ফেসবুক একাউন্ট থেকে উক্ত ৬ জন সমন্বয়কসহ অন্যান্যদের খাবার গ্রহণের কয়েকটি ছবি আপলোড করা হয়। এই পোস্টের ক্যাপশনে, বা তার প্রোফাইলের অন্য কোনো পোস্টেও সমন্বয়কদের কাছ থেকে অস্ত্র বা টাকা উদ্ধারের কোনো তথ্য নেই।
এই ৬ সমন্বয়কের পরিবার একাধিকবার সাংবাদিকদের সামনে এসেছেন। এর মধ্যে, একবার তারা সাংবাদিকদের কাছে ‘ডিবি অফিসে গিয়ে সন্তানদের সাথে দেখা করতে না পারার’অভিযোগ করেছিলেন। তবে কখনোই তাদের কাছ থেকে কথিত অস্ত্র বা টাকা উদ্ধার সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ তারা করেননি। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে,ডিবির পক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের এমন কোনো ঘটনার দাবি তাদের পরিবারের কাছেও করা হয়নি।
অর্থাৎ, কেবলমাত্র ফেসবুকে তথ্যসূত্রবিহীন কয়েকটা পোস্ট ছাড়া, এই সমন্বয়কদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ উদ্ধারের কোনো তথ্য সংবাদমাধ্যম বা অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সার্বিক বিবেচনায়, ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।