বাংলাদেশে মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার গুজব

8
বাংলাদেশে মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার গুজব বাংলাদেশে মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার গুজব

Published on: [post_published]

বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী আজ বিএসএমএমইউতে সনাক্ত হয়েছে—এমন একটি গুজব অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি নিছকই গুজব। বিএসএমএমইউ-এর পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গুজবের উৎস

আজ, ২৩শে মে বিকাল ৫ টা থেকে ইংরেজি এবং বাংলায় এই গুজব ছড়াতে থাকে।

Micronotes নামের এই পেজে বিকাল ৫ টা ৪৮ মিনিটের পোস্টে বলা হয়, 1st case of Monkeypox diagnosed in Bangladesh today in BSMMU. Be alert,Be safe. Courtesy: Dr Asif Wahid
(বাংলাদেশে মাংকিপক্স এর প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছে আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে । সবাই সূস্থ থাকুক, সতর্ক থাকুন। সৌজন্য- ডাক্তার আসিফ ওয়াহিদ)

এই গুজব ব্যাপকভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।

সন্ধ্যা ৬ টা ২৮ মিনিটে ডিফেন্স রিসার্স ফোরাম নামক পেজের এই পোস্টে বাংলায় বলা হয়,

বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী সনাক্ত

#General_Health

বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী বিএসএমএমইউ সনাক্ত হয়েছে।

সবাই সাবধানে থাকুন,হাত মুখ পরিস্কার রাখুন।জ্বর,কাশি,র‍্যাশ হলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হউন।এ ব্যাধি নিরাময় যোগ্য।পালিত পশু পাখি কিংবা বন্যপ্রাণী সাবধানে হ্যান্ডেল করুন

দেশের সীমান্ত এবং আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে ইতিমধ্যেই সতকর্তা জারি রয়েছে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।

করোনার মতো মাংকিপক্স প্রতিরোধে সবার সচেতনতা কাম্য

এই পোস্টটি ব্যাপকভাবে শেয়ার ছাড়াও অনেকে তথ্যটি নতুনভাবে নিজেদের ওয়ালে বা পেজে বা গ্রুপে শেয়ার করতে থাকেন। ফলে গুজবটি ভাইরাল হয়।

এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে , এখানে ,এখানে , এখানে ,এখানে , এখানে , এখানে


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

নতুন ধরনের কোনো রোগ কোনো দেশে ধরা পড়লে সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তার ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীর নাম পরিচয় কিংবা হাসপাতাল ও গোপন রাখা হয়। যেমন- ২০২০ সালের ৮ই মার্চ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর কথা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ।

এছাড়া ২০২১ সালের ১১ই ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদ সম্মেলনে দেশে করোনার ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

দেখা যাচ্ছে, কখনোই কেবলমাত্র একজনমাত্র চিকিৎসক ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন রোগ সনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করছেন না।

ভাইরাল হওয়া পোস্টে জনৈক ডাক্তার আসিফ ওয়াহিদ কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, তার মূল পোস্ট কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই আসিফ ওয়াহিদ এর পরিচয় কিংবা কর্মস্থল সম্পর্কেও গুজব এর পোস্টগুলোতে বিস্তারিত তথ্য নেই।

তবে বিসিএস এর ৩৯ তম ব্যাচের স্বাস্থ্য ক্যাডারে একজন আসিফ ওয়াহিদ (Asif Wahid) আছেন, যার সাথে গুজবে ব্যবহার করা Asif Wahid এর নামের বানানে মিল রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর ইউরোলজি বিভাগ এর রেসিডেন্ট হলেও বর্তমানে  নোয়াখালির সেনবাগ এর  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন।

ফ্যাক্টওয়াচ এর পক্ষ থেকে ডাক্তার আসিফ ওয়াহিদ এর ফেসবুক একাউন্টে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে তিনি সেনবাগে অবস্থান করছেন । ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ নেই। ওখান থেকে ৩ বছরের জন্য ছুটি নিয়েছেন । কাজেই ওখানকার কোনো খবর তিনি জানেন না। আদৌ মাংকিপক্স সনাক্ত হয়েছে কি হয়নি, সেটা তিনি নিশ্চিত করতে পারবেন না । তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন , মাংকিপক্স সম্পর্কিত কোনো তথ্য তিনি ফেসবুকে শেয়ার করেন নি ।

ফ্যাক্টওয়াচকে তিনি আরো জানান, বিকালে আমি ক্রিকেট খেলছিলাম। খেলা শেষ করে অনলাইনে প্রবেশ করে দেখি আমার নামে ভুল তথ্য সম্বলিত পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।

একইসাথে , তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে একটি পোস্টে জানান, আমার নামে Monkey pox নিয়ে যে পোস্ট ফেইসবুকে লিখা হচ্ছে তা আমার আইডি থেকে দেয়া না।

এই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।

ডাক্তার আসিফ ওয়াহিদ কে উদ্ধৃত করে মাংকিপক্স সনাক্তের ঘটনাকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করেছে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার।

অন্যদিকে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ও হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন , বিএসএমএমইউ থেকে এমন কোনো তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি এবং মাংকিপক্সের কোনো রোগী বিএসএমএমইউ তে সনাক্ত হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। – এমনটাই জানা যাচ্ছে সারাবাংলা এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর প্রতিবেদনে।

এছাড়া , সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট— আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত দেশে মাংকিপক্স আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমাদের কাছে এখনও কোনও নমুনা আসেনি।

BSMMU এর আনভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও একটি পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এখানে মাংকিপক্সের কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

তাই সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বাংলাদেশে এখনো মাংকিপক্স আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ঢাকার একটি হাসপাতালে মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.