‘‘ট্রেনের নতুন লুক, ধন্যবাদ বাংলাদেশ রেলওয়ে’’ শীর্ষক একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ছবিতে ঢাকা এবং পঞ্চগড় এর মধ্যে চলাচলকারী দ্রুতযান/একতা এক্সপ্রেস এর একটি কামরার অংশবিশেষের ছবি দেখানো হয়েছে, যেখানে প্রতিটি জানালা প্লাস্টিকের নেট দিয়ে ঢাকা ছিল। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই ছবিটি জোড়া দেয়া ছবি। বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনযাত্রীদের উপর পাথর ছোড়া থেকে রক্ষার জন্য নেট লাগানোর পরিকল্পনা করছে ঠিকই, কিন্তু দেশের কোথাও কোনো ট্রেনে এমন নেট লাগানোর কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১০ই অক্টোবর রাত ২ টা ৩৫ এবং ২ টা ৩৬ মিনিটে Chokkor Travel & Tourism নামক গ্রুপে একাধিক ফেসবুক আইডির সাহায্যে একাধিক পোস্ট আপলোড করা হয়েছিল । (দেখুন- এখানে , এখানে , এখানে ) পরদিন সকালে অন্যান্য বিভিন্ন পেজ,গ্রুপে এবং প্রফাইল থেকেও এই ছবি শেয়ারের মাধ্যমে গুজবটা ভাইরাল হয়ে যায়।
ব্যানার স্টাইলের এই ছবিতে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের দ্রুতযান এক্সপ্রেস ( যা একতা এক্সপ্রেস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়) এর একটি কামরার ছবি দেখা যায়। কামরার প্রতিটা জানালায় নেট লাগানো হয়েছে, যেটা বাংলাদেশের ট্রেনে দেখা যায় না। এই ছবির উপরে হেডিং হিসেবে লেখা রয়েছে ‘ট্রেনের নতুন লুক, নেট লাগানো হয়েছে।’
ছবির নিচের অংশে সোর্স হিসেবে vromoninfo.com এর ওয়েব ঠিকানা এবং ‘নতুন সংস্করণ’ কথাটি রয়েছে।
চক্কর ট্রাভেলস এর আপলোড করা ছবিতে ক্যাপশন হিসেবে বলা হয়েছে, ট্রেনেরজানালায়নেটলাগানোরসিদ্ধান্তটিসত্যিইপ্রশংসারদাবীদার ! এতেশুধুপাথরনিক্ষেপনা; জানলাথেকেমোবাইলফোন, ব্যাগছিনতাই, অবৈধযাত্রীপ্রবেশএবংযন্ত্রাংশচুরিওএকইসাথেবন্ধহবেবলেআমরাযাত্রীরাআশাবাদী।ধন্যবাদবাংলাদেশরেলওয়ে।
হুবহু একই ক্যাপশনে বেশ কিছু পোস্ট গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এসব পোস্টের সাথে কয়েকটি এডিট করা ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কোথাও দাবি করা হয়নি যে এটা নতুন ট্রেন এর ছবি। ‘নেট লাগানো হয়েছে’ এমন তথ্য সম্বলিত ছবি ১০ই অক্টোবরেই শুধু দেখা যাচ্ছে।
ছবিটির মূল উৎস
উইকিপিডিয়াতে দ্রুতযান এক্সপ্রেস নামক ট্রেনের ছবি হিসেবে এই ভাইরাল হওয়া ছবিটা দেখা যাচ্ছে। উইকিপিডিয়া সম্পাদনার ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, জনৈক রুহান ২০১৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি এই ভোর ৪ টা ৪৮ মিনিটে এই ছবিটি আপলোড করেছিলেন।
তবে এই ছবিতে জানালায় কোনো নেট দেখা যাচ্ছেনা। ট্রেনের জানালায় যাত্রী সহ অন্যান্য সকল বিষয়বস্তু একই রয়েছে। সুতরাং , নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই ছবিটাই এডিট করে আজকের ভাইরাল ছবিটা তৈরি করা হয়েছে ।
দ্রুতযান কিংবা অন্য কোনো ট্রেনে কি নেট লাগানো হয়েছে ?
গত রবিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রেল ভবনে ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলওয়ে গৃহীত ব্যবস্থা ও মিডিয়ার ভূমিকা’শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি এবং আহত হয়েছেন ২৯ জন। পাথর নিক্ষেপ রোধে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে মন্ত্রণালয়। যেসব জায়গায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে , সেসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় হতাহত ঠেকাতে কোচের জানালায় নেট লাগানো কথাও ভাবছে রেলওয়ে।
তার এই বক্তব্য সেদিন জাতীয় পত্রপত্রিকায় বেশ গুরুত্বের সাথেই প্রকাশিত হয়েছিল। (যেমন দেখুন এখানে, এখানে , এখানে ,এখানে , এখানে , এখানে , এখানে )
রেলমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে নেট লাগানোর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে আলোচনা শুরু হয়।
এসব আলোচনায় ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পুরনো কিছু ট্রেনের ছবিতে ফটো এডিটিং টুল এর সাহায্যে এডিট করে নেট বসালে কেমন দেখাবে, সেটা তুলে ধরেছিলেন। তবে কেউই দাবি করেননি, ‘এটা নতুন ট্রেনের ছবি’।
১০ই অক্টোবর ই প্রথমবারের মত পুরনো একটি ছবিকে এডিট করে ‘ট্রেনের নতুন লুক।নেট লাগানো হয়েছে’ হেডিং সহ আপলোড করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ রেলওয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য ট্রেনের জানালায় নেট লাগানোর কথা ভাবছে । তবে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ট্রেনে নেট লাগানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। এটা কেবলমাত্র পরিকল্পনার পর্যায়েই রয়েছে। দ্রুতযান এক্সপ্রেস কিংবা কোনো ট্রেনেই এমন কোনো নেট এখনো যোগ করা হয়নি। আলোচ্য ভাইরাল ছবিটি একটি পুরনো ছবি, যেখানে ফটো এডিটিং টুলের সাহায্যে নেট যোগ করে ‘ট্রেনের নতুন লুক (চেহারা)’ বলে দাবি করা হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা বিবরণ-সম্বলিত এসব ছবিকে “বিকৃত” সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?