ওবায়দুল কাদের বাসায় র‌্যাবের কোনো অভিযান হয় নি

10
ওবায়দুল কাদের বাসায় র‌্যাবের কোনো অভিযান হয় নি ওবায়দুল কাদের বাসায় র‌্যাবের কোনো অভিযান হয় নি

Published on: [post_published]

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাসায় র‍্যাবের অভিযানে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে এবং তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই তথ্যের সত্যতা মেলেনি। মূলত পুরনো কয়েকটি ভিডিও জোড়াতালি দিয়ে এই ভিডিও বানানো হয়েছে এবং গতবছরের ভিন্ন একটি ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের ভিডিওকে ওবায়দুল কাদের বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

গুজবের উৎস

৮ মিনিট ২ সেকেন্ড এর এরি ভিডিওটি দেখা যায় সাংসদ রুমিন ফারহানার নাম দিয়ে বানানো এই পেইজ এবং আরেকটি পেইজ,  ইউটিউবার ইলিয়াস হোসাইনের নামে বানানো এই পেইজ, এবং Abdus Sattarpcv নামের এই প্রোফাইল, BD Express এবং আরো বিভিন্ন পেজে।


Jonotar Kontho (জনতার কন্ঠ) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলেও একই ভিডিও আপলোড করা হয়। দেখুন এখানে

এছাড়া, এই ভিডিওই কয়েকবার লুপে চালিয়ে ৪০ মিনিটের ভিডিও হিসেবে রূপান্তরিত করে প্রকাশ করা হয়েছে দেখুন Top 10 Video নামক পেজে (দেখুন এখানে)

ভিডিওর ক্যাপশন ছিল – এইমাত্র ওবায়দুল কাদের বাসায় কোটি কোটি টাকা। রে*বের (র‍্যাবের) অভিযান । এছাড়া ভিডিওর থামবনেইলে ব্যবহৃত ছবিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) নিজেও অবাক, কাদেরের বাসা (বাসায়) এত টাকা?

ভিডিওর ভিতরের অংশে, প্রথম মিনিটে দাবি করা হয় ওবায়দুল কাদেরের বাসায় র‍্যাবের অভিযানে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে, এবং দেশি বিদেশী মদও উদ্ধার করা হয়েছে।

অনুসন্ধান

এই ভিডিওটি অনেকগুলো ছোট ছোট ক্লিপের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেমন শুরুতেই যে মহিলা সংবাদ পাঠিকা আব্দুল কাদের মির্জার বরাত দিয়ে হাজার কোটি টাকার কথা বলছেন সে ক্লিপটি এটিএন নিউজের ১৭ এপ্রিল ২০২১ সালের একটি খবরের ভিডিও’র খন্ডাংশ। এই নিউজে আব্দুল কাদের মির্জার দাবি যে ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী এবং আত্মীয়রা হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন- সে দাবি নিয়ে আব্দুল কাদের মির্জার একটি ফেইসবুক লাইভের ফুটেজ দেখানো হয়েছে। দেখুন এখানে

আমাদের আলোচ্য ভিডিওতে এই খবরের শুরুর ৯ সেকেন্ডের দৃশ্য নিয়ে গঠিত , এবং মূল ভিডিওটি সাদা-কালো তে এডিট করে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওতে পরবর্তী ক্লিপ হিসেবে দেখানো হয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের একটি বক্তব্যের খন্ডাংশ, এই বক্তব্য ছিল ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর। ভিডিওটি বাংলা ভিশন এর ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত হয়েছিল। নুরু পেশাজীবী অধিকার পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অন্যান্য আরো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এবং তাদের ক্লিপও এই ভিডিওতে দেয়া হয়েছে। মূল ভিডিও  এখানে।

ভিডিওর ২৫ তম সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ০ সেকেন্ড পর্যন্ত কোনো একটি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল ও মাদক দ্রব্য উদ্ধারের ফুটেজ দেখা যায়। ভিডিও ভাষ্যকার এ সময় বলেন, দর্শক, এইমাত্র পাওয়া খবর, ওবায়দুল কাদের বাড়িতে নাকি কোটি কোটি টাকা এবং অঢেল সম্পদের তথ্য মিলেছে। —-এদিকে র‍্যাবের অভিযানে কিন্তু থরে থরে সাজানো মদের বোতলের সন্ধান মিলেছে ।‘

অনুসন্ধানে দেখা গেল, এসময়ে মদ উদ্ধারের যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে সেটি  ছিল ৪ নভেম্বর ২০২১ সালের একটি খবরের ভিডিও । এসময় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে এসকল মদ ও মাদক সহ এক নাফিস মোহাম্মদ আলম নামক এক শিক্ষার্থীকে আটক করে র‍্যাব। র‍্যাবের দাবি, এই নাফিজ গুলশান , বনানীসহ অভিজাত এলাকায় মদ ও মাদক সরবরাহ করত।   (লিংক)

ভাইরাল ভিডিওতে বক্তা যদিও দাবি করেন যে তারা “তথ্যসহ প্রমাণসহ” দেখাবেন, কিন্তু তারা এরপরে নুরুল হক নুর এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ভিডিও দেখানো ছাড়া আর কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেন নি। এভাবেই ৮ মিনিট ২ সেকেন্ড এর ভিডিওটি শেষ হয়।

অর্থাৎ-

ভিডিওর শুরু ক্লিপটি ছিল এটিএন নিউজের ১৭ এপ্রিল ২০২১ সালের একটি খবরের ভিডিও’র খন্ডাংশ যেখানে ওবায়দুল কাদের এর ভাই আব্দুল কাদের মির্জার করা অভিযোগের ভিডিও দেখানো হয়েছে।

এরপরের অংশটি ছিল সময় টিভির ৪ নভেম্বর ২০২১ সালের শিক্ষার্থী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে মাদক বিক্রি নামক প্রতিবেদনের অংশ।

এবং বাকি ভিডিও জুড়ে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনার বক্তাদের ভিডিওর অংশ দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ, ভিডিওর ক্যাপশনে, এবং ইন্ট্রোতে ওবায়দুল কাদের এর বাসায় র‍্যাবের অভিযানের কথা বলা হলেও ভিডিওর মূল অংশে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।  সাম্প্রতিক সময়ে ওবায়দুল কাদেরের বাসায় র‍্যাব বা আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানের কোনো খবর কোনো দেশি বা বিদেশি বাংলা সংবাদমাধ্যমে আসে নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে ওবায়দুল কাদের নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং তার বক্তব্য নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়া, নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সক্রিয় আছেন।

সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই ভিডিওকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.