বাংলাদেশে চাকরি করা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা কত ?

255
বাংলাদেশে চাকরি করা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা কত ?
বাংলাদেশে চাকরি করা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা কত ?



বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২৬ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক চাকরি করছে- এমন একটি প্রচারণা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে। ফেসবুক,ইউটিউব ছাপিয়ে ওয়াজের ময়দান এমনকি রাজনীতির রাজপথেও অনেক বক্তাই ২৬ লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের উপস্থিতির এই দাবিটি করেছেন। তবে তাদের দাবির সপক্ষে কখনো যথাযথ তথ্যপ্রমাণ প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। ফ্যাক্টওয়াচের এই ফ্যাক্টফাইলে বাংলাদেশে অবস্থান করা ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা জানার চেষ্টা করা হবে।

অনুসন্ধান





ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত ১৬ই মে,২০২৪ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর লংমার্চ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে ড আসিফ নজরুল বলেন, আমার প্রশ্ন, যখন আমরা পাকিস্তান আমলে ছিলাম তখন কতজন পাকিস্তানী এই দেশে চাকরি করত? আর এই স্বাধীন বাংলাদেশে কতজন ভারতীয় এই দেশে চাকরি করে? আমরা পত্রপত্রিকায় দেখি ২৬ লাখ ভারতীয় চাকরি করে। বাংলাদেশের ছেলেরা চাকরি পায়না রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে আর ভারতীয়রা এখানে এসে চাকরি করছে। (এই বক্তব্যের ভিডিও দেখতে পাবেন এখানে,এখানে)

ড. আসিফ নজরুল যদিও নির্দিষ্ট কোনো সংবাদমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেননি, বা নির্দিষ্ট কোনো প্রতিবেদন দেখাননি বা তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করেননি, তবুও পরবর্তীতে ড. আসিফ নজরুলকেই তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে অনেকে ‘বাংলাদেশে ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিক চাকরি করছে’ এই দাবিটি প্রচার করতে থাকে। (এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে)। একটি ওয়াজ মাহফিলে  মাওঃ মাহমুদুল হাসান মনোয়ারও ড. আসিফ নজরুলের বরাত দিয়ে একই দাবি করেন।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ব্যাপক আকারে এই দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক,ইউটিউব ছাপিয়ে রাজনীতির ময়দানেও এই সংখ্যাটি আলোচিত হতে থাকে। গত ২৪শে আগস্ট ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এন পি পি) এর একটি সমাবেশে বাংলাদেশে ২৬ লক্ষ ভারতীয় চাকরি করে জানিয়ে অবিলম্বে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

তবে এসব বক্তাদের কেউই ’২৬ লক্ষ’ এর সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ প্রদর্শন করেননি।

এই পরিস্থিতিতে, ফ্যাক্টওয়াচ এর পক্ষ থেকে বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক,বিশেষত ভারতীয় নাগরিকদের উপস্থিতি নিয়ে যে সকল তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সংকলন করার চেষ্টা করা হল। 


১। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ৬ই আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর ভারতের দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের নিম্নকক্ষ,লোকসভায় একটি বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশে আনুমানিক ১৯,০০০ ভারতীয় নাগরিক রয়েছে, যার মধ্যে ৯,০০০ শিক্ষার্থী। জুলাই মাসে আন্দোলন জোরালো হতেই ভারতীয় হাইকমিশনের পরামর্শে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে ফিরে এসেছে।

এস জয়শংকরের এই বক্তব্যের লিখিত অনুলিপি ভারতের মিনিস্ট্রি অফ ফয়েন এ্যাফেয়ার্সে এর ওয়েবসাইটে রয়েছে। এছাড়া ভিডিও বক্তব্য দেখতে পাবেন এখানে

২। জাগরন ত্রিপুরা ডট কম নামক ওয়েবসাইটে গত ১৯শে জুলাই,২০২৪ তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশে মোট ভারতীয় নাগরিক ১৫ হাজার, যার মধ্যে ছাত্র ৮৫০০ জন শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোট ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন ১৫ হাজার।  যার মধ্যে ছাত্র রয়েছেন ৮,৫০০ জন। বাংলাদেশস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন কার্যালয় থেকে এক বিবৃতি জারি করে একথা জানানো হয়েছে।

তবে বাংলাদেশস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন এর ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে বর্তমানে এই সংখ্যাদুটির উল্লেখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রেডিও তেহরান এ ২০শে জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদে এই সংখ্যাদুটির উল্লেখ দেখা যাচ্ছে। ৯৯৮ ভারতীয় শিক্ষার্থী দেশে ফিরে গেছেন শীর্ষক এই সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে থাকা সকল ভারতীয় নাগরিক নিরাপদ ও সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১৫ হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৫০০।

৩।  বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান ২০২৩ সালের ১৩ই জুন জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের ১১৫টি দেশের ২০,৯৮৮ জন বিদেশি নাগরিক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি চীনের নাগরিক। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারতীয়রা।

 বিদেশিদের মধ্যে ৬ হাজার ৭৫ জন চীনা, ৫ হাজার ৮৭৬ জন ভারতীয়, ২ হাজার ৪৬৮ জন রুশ, ১ হাজার ২৪৬ জন শ্রীলঙ্কান, ৯২৪ জন দক্ষিণা কোরিয়ান, ৫৫৭ জন জাপানি, ৪১৬ জন পাকিস্তানি, ৪৬০ জন ফিলিপিনো, ৩৯৯ জন থাই, ৩৭৮ জন বেলারুশিয়ান, ২৬৯ জন কাজাখ, ১৬৮ জন আমেরিকান, ১৩৯ জন কোরিয়ান, ১২৩ জন মালয়েশিয়ান, ১০৮ জন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক রয়েছেন।
সে সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি খবর দেখতে পাবেন এখানে,এখানে


৪। ২০১৮ সালে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, , এ দেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তাঁদের অর্ধেকই ভারতীয়। ভারতীয়দের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন এবং চীনা ১৩ হাজার ২৬৮ জন। এরপর রয়েছে জাপান—৪ হাজার ৯৩ জন। এ ছাড়া কোরিয়ার ৪ হাজার ৯৩ জন, মালয়েশিয়ার ৩ হাজার ৩৯৫ জন ও শ্রীলঙ্কার ৩ হাজার ৭৭ জন নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন।

স্পষ্টত, ২০১৮ এর চেয়ে ২০২৩ এ দেখানো হিসাবে বিদেশীদের সংখ্যা অনেক কম। কোভিড মহামারীর কারণে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণ এবং অন্যত্র কাজ করার সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে এমন হতে পারে।

৫। দৈনিক সমকালে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসতে শত বাধা শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি নাগরিক এসেছেন ৫ লাখ ৬৬৫ জন, ২০১৮ সালে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ জন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ বিদেশি নাগরিক দেশে আসেন, এ সংখ্যা ৬ লাখ ২১ হাজার ১৩১। করোনার সময় ২০২০ সালে এসেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন, ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন আর ২০২২ সালে দেড় লাখ বিদেশি আসেন। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার।


বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর ডট কম এ ২২শে নভেম্বর,২০১৯ তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশে পর্যটকদের মাত্র ২ শতাংশ বিদেশি! শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে এক লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৮ জন, ২০১৫ সালে এক লাখ ৪১ হাজার ৯১৭ জন, ২০১৬ সালে দুই লাখ ৯৯৫ জন, ২০১৭ সালে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৪৯১ জন, ২০১৮ সালে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭০৭ জন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৭ জন বিদেশি পর্যটন ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

তবে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড এর ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে এসব প্রতিবেদনের তথ্যের কিছুটা গরমিল দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের ওয়েবসাইটের এই সারণীতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আগত বিদেশী পর্যটক এর সংখ্যা ছিল ৩,২৩,২৯৫ জন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছিলেন ভারতীয়, যার সংখ্যা হল ২,৭০,০২৪ জন। এই সারণীতে ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তথ্য উপাত্ত দেওয়া হয়েছে। এই সারণী অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ভারতীয় পর্যটক ছিল বার্ষিক ২,৭০,০২৪ জন এবং সর্বনিম্ন বার্ষিক ৬৯,২৪৩ জন।

পর্যটক ভিসায় আগত ভারতীয়দের মধ্যে অনেকে গার্মেন্টস সেক্টর সহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়। তবে মোট পর্যটকের মধ্যে কত শতাংশ এরকম কর্মজীবি রয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যায়নি।


৬। ২০২৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ ভবনে আয়োজিত একটি সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেনতকালী সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশী নাগরিকদের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭। এর মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগসংক্রান্ত ভিসায় এসেছেন ১০ হাজার ৪৮৫ জন, এমপ্লয়ি ভিসায় ১৪ হাজার ৩৯৯, স্টাডি ভিসায় ৬ হাজার ৮২৭ ও ট্যুরিস্ট ভিসায় এসেছেন ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন। সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের নাগরিক রয়েছেন ১১ হাজার ৪০৪ জন।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে,এখানে, এখানে


৭। জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ভেলেতে ২০২০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত বেসরকারি খাতে ভারতীয়দের দাপট শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবমিলিয়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করে বলে ধারণা করা হয় ৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই৷ তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন৷ আর তাদের বেতন অনেক বেশি৷ ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের আয়করা পুরো অর্থই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায়৷

বাংলাদেশের বেসরকারী চাকরির বিভিন্ন খাত ,যেমন পোশাক, বায়িং হাউজ, আইটি এবং সেবা খাতে নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে ডয়েচে ভেলে এই সংখ্যাটি উল্লেখ করেছিল। ডয়েচে ভেলের এই প্রতবেদনের বরাতে একাধিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশে ৫ লাখ ভারতীয়’ থাকার কথা উল্লেখ করেছিল। যেমন দেখুন এখানে,এখানে,এখানে, এখানে, এখানে

৮। আমাদের সময় ডট কম এ গত ৩রা জুলাই ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত,জনৈক রাশিদ রিয়াজ এর লেখা বাংলাদেশ থেকে দশ লাখ ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে দেশে পাঠাচ্ছে ১ হাজার কোটি ডলার শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত বছর ভারত বাংলাদেশে বসবাসরত দেশটির নাগরিকদের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অন্তত দশ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন।—— বর্তমানে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশন সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উপাত্ত নয়, বরং ‘আভাস’ এর ভিত্তিতে এই ১০ লাখ এর কথা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বা ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনের কোনো প্রতিবেদন বা কোন বিবৃতির ভিত্তিতে এমন ‘আভাস’ পাওয়া গেল, সেটাও খোলাসা করা হয়নি।

৯।প্রথম বাংলাদেশ ডট নেট নামক অনলাইন পোর্টালে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি,২০২৪ তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশে ১০ লাখ অবৈধ ভারতীয়ঃ দেশ রাজস্ব হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা শীর্ষক নিবন্ধেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উপাত্ত ছাড়াই দাবি করা হয়েছে যে ভিজিট বা টুরিস্ট ভিসায় এসে বাংলাদেশে কাজ করছেন অন্তত ১০ লাখ ভারতীয় নাগরিক।



বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা নিচের সারণীতে উল্লেখ করা হল।

ক্রমিকসংখ্যাসূত্রতথ্য সংগ্রহের তারিখমন্তব্য
১৯,০০০ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, লোকসভা ভাষণে৬ আগস্ট,২০২৪ 
১৫,০০০জাগরন ত্রিপুরা ও রেডিও তেহরান১৯ জুলাই,২০২৪ 
৫,৮৭৬বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,সংসদ বক্তব্যে১৩ জুন,২০২৩ 
৩৫,৩৮৬বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,সংসদ বক্তব্যে৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৮ 
২,৭০,০২৪বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড২০১৯পর্যটক সংখ্যা
৩৭,৪৬৪বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)৭ ফেব্রুয়ারি,২০২৪ 
৫,০০,০০০ডয়েচে ভেলে ,নিজস্ব অনুসন্ধান৬ ফেব্রুয়ারি,২০২০ 
১০,০০,০০০আমাদের সময়, নিজস্ব অনুসন্ধান৩ জুলাই,২০১৮ 
১০,০০,০০০প্রথম বাংলাদেশ , নিজস্ব অনুসন্ধান১৩ ফেব্রুয়ারি,২০২৪ 

অর্থাৎ, বিভিন্ন সূত্র যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকের সর্বোচ্চ দাবিকৃত সংখ্যা হল ১০ লাখ ,এবং সর্বনিম্ন ৫,৮৭৬ জন। তবে ২৬ লক্ষ বা এর কাছাকাছি কোনো সংখ্যা কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে শোনা যায়নি।


আরো পড়তে পারেন-

বাংলাদেশ পুলিশে ৮০ হাজার ভারতীয় নাগরিক নিয়োগের ভুয়া দাবি

পুলিশ বাহিনীতে ভারতীয় নাগরিক — এমন কোন খবর প্রকাশ করেনি প্রথম আলো


No Factcheck schema data available.