এবার মক্কার ইমামের কাছে তওবা করবেন নুপুর শর্মা- শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই খবরের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটাকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
ভিডিও লিংকটির ক্যাপশনটিতে দাবি করা হয় হঠাৎ লাইভে এসে নুপুর শর্মা দাবি করেছেন তিনি মক্কার ঈমামের নিকট তওবা করবেন।
নয় মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি চালু করার পর দেখা গেলো একজন উপস্থাপক দাবি করছেন “ভারতে যে নবীকে কুটুক্তি করেছিলেন নুপুর শর্মা; অবশেষে তিনি ক্ষমা চাইবেন সকল মুসলিম জাতির কাছে এবং আল্লাহর কাছে। এদিকে মক্কার ইমামকে ফোন করে যা বললেন-“
এই বক্তব্য দেওয়ার পরেই তিনি বলেন তার উল্লেখ্য ভিডিওটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ হতে যাচ্ছে আর সবাই যেন তার চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করেন।
তবে ভিডিওতে কোথাও তার নাম বা তার চ্যানেলের নাম প্রকাশিত হয় নি। এরপরই তিনি তার স্ক্রিনে -08.40 মিনিটে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখাতে থাকেন যেখানে এক নারীর লাইভ বক্তব্য পাওয়া যায়।
নারীটি তার নাম অনুসূয়া দাশ হিসেবে উল্লেখ করে নিজেকে হাওড়ার অধিবাসী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি নুপুর শর্মাকে একজন “সস্তা বিজেপি নেত্রী” উল্লেখ করে দীর্ঘক্ষণ (৬ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত) পর্যন্ত তার কথা চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে কটুক্তি করার জন্য নুপুর শর্মাকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন এবং তার নিজের হিন্দুধর্ম তাকে অন্য ধর্মের কাউকে আঘাত দিতে শেখায় নি — এমন দাবি করেন।
কিছুক্ষণ বিভিন্নভাবে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দূরবস্থার জন্য বিজেপি সরকার ও নরেন্দ্র মোদিকে দোষারূপ করার মাঝখানে উপস্থাপক তার স্ক্রিনে দেখাতে থাকা ভিডিও ক্লিপটি বন্ধ করে দিয়ে ৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড এ আরেকটি খবর পাঠ করার অংশবিশেষ চালু করেন যেখানে নুপুর শর্মার বক্তব্যের কারণে অন্যান্য দেশগুলো ভারতকে ক্ষমা চাইতে বলার খবরের ক্লিপ দেখতে পাওয়া যায়। এরপর যথারীতি পুরনো এই ইস্যুর বিস্তারিত খবর পাঠ করতে শোনা যায় ৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। এরপর ই উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন তাদের সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখানো হয়েছে এবং তিনি তার ভিডিওগুলোর জন্য কোনো মন্তব্য থাকলে তা কমেন্ট বক্সে জানাতে বলেন।
বলাবাহুল্য, ভিডিওটি শুরুর দিকের উল্লেখিত দাবিটির সাথে চলমান ভিডিওটিতে প্রাসংগিক কোনো কথাই আর উল্লেখ করা হয় নি। এমনকি নুপুর শর্মা যে মক্কার ইমামের নিকট ফোন করেছেন বলা হলো তার কোনো প্রমাণ পর্যন্ত নয়। শুধুমাত্র ভিডিওর শিরোনামেই এই তথ্যটি রয়েছে।
ভিডিও শুরুর দিকে যে মহিলাটির কান্নার ভি্ডিও’র অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছিল, তিনি বাংলায় কথা বলছিলেন এবং তাকে কোনোভাবেই নুপুর শর্মা বলে মনে হয়নি।
এছাড়াও এই ভিডিও ক্লিপটি ঢালাওভাবে শুধু ফেসবুকেই শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। কোনো ইউটিউব চ্যানেল বা দেশের কোনো ইলেট্রনিক মিডিয়ায় এমন কোনো খবর প্রচার করা হয়নি।
নুপুর শর্মা’র ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকে সর্বশেষ ৫ই জুন এর পরে আর কোনো টুইট করা হয়নি।
৫ই জুন এর টুইটে তিনি বলেছিলেন, যদি আমার কথাগুলো অস্বস্তি সৃষ্টি করে বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, আমি নিঃশর্তভাবে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
এই টুইট কেই কোনোকোন সংবাদমাধ্যম ‘ক্ষমা চাওয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে, যদিও তার টুইটে ক্ষমা (Apology) বা এর কোনো প্রতিশব্দ দেখা যায়নি।
এছাড়া মক্কার ইমামের কোনো প্রসঙ্গ ও এই টুইটে কিংবা সংবাদ্গুলোতে আলোচিত হয়নি।
মক্কার ইমাম শেখ আব্দুর রহমান আল সুদাইস এর স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতেও নুপুর শর্মার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল এই বিবৃতিতেও নুপুর শর্মাকে মক্কার ইমামের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো দাবি জানানো হয়নি।
কাজেই, ‘মক্কার ইমামের কাছে তওবা করবেন নুপুর শর্মা’ ক্যাপশনযুক্ত এই ভিডিওটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?