জয় বাংলা গান শুনে নিজেকে সামলাতে না পেরে আওয়ামী মিছিলে যোগ দিলেন নুরুল হক নুর এমন দাবিযুক্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদ এর একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর এর নেতৃত্বে একটি মিছিল এগিয়ে চলেছে এবং নেপথ্যে “জয় বাংলা/জিতবে আবার নৌকা” গানটি বাজছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, গতকাল ৫ই জানুয়ারি বিজয়নগর এলাকায় একটি সমাবেশ শেষে গণ অধিকার পরিষদের এই মিছিল পল্টন , প্রেসক্লাব ইত্যাদি এলাকায় ঘুরে শেষ হয়। এই মিছিলের একাধিক ভিডিও থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান শোনা যায়। তবে জয় বাংলা/জিতবে আবার নৌকা শীর্ষক জনপ্রিয় গানটি এই মিছিলে শোনা যায়নি। এছাড়া বাদ্যযন্ত্রসহ মূল গানটিই এই ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, যেভাবে গাওয়াটা মিছিলের পক্ষে অনুপযোগী। বরং এই গানটি পরবর্তীতে মিছিলের ভিডিওতে যোগ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।
এসব ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, জয় বাংলা গান শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না নুরুল হক নুর। এছাড়া ভিডিওর বডিতে লেখা হয়েছে, জয় বাংলা গান শুনে নিজেকে সামলাতে না পেরে আওয়ামী মিছিলে যোগ দিলেন নুরুল হক নুর।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে দেখা যাচ্ছে, গতকাল শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ‘একতরফা ডামি নির্বাচন বর্জন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে’বিজয়নগর পানির ট্যাংকি মোড় ও আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে অনুষ্ঠিত গণঅধিকার পরিষদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । এই সমাবেশ শেষ গণমিছিল শুরু করে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, বিএনপির দলীয় কার্যালয়, নাইটিংগেল মোড় ঘুরে পল্টন মোড়ে হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে আবার পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়। ( এ সংক্রান্ত কয়েকটা প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে )
এই গণমিছিলে ব্যবহৃত ব্যানারে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ছিল, একতরফা ডামি নির্বাচন বর্জন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে গণ মিছিল। গণ অধিকার পরিষদ’ । এই ব্যানারের দুই পাশে গণ অধিকার পরিশদের একাংশের দুই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব , নুরুল হক নুর এবং রাশেদ খান এর ছবিও রয়েছে।
অন্যদিকে জয় বাংলা গান শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না নুরুল হক নুর ক্যাপশনযুক্ত ভিডিওতেও একই ব্যানার দেখা যাচ্ছে। এছাড়া মিছিলের সামনের কাতারে নুরুল হক নুরের পাশে একই নেতা-কর্মীকে দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে দুইটা ছবিই একই মিছিলের ছবি। এছাড়াও, এটা আওয়ামী লীগের কোনো মিছিলের ছবি নয়, বরং গণ অধিকার পরিষদের একাংশের মিছিলের ছবি বলেও প্রমাণিত হচ্ছে।
BNP Media Cell নামক ভেরিফাইড পেজ থেকে এই সমাবেশ এবং মিছিল লাইভ সম্প্রচার করা হয়। একই মিছিলের আংশিক ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ও News S M Update নামক পেজ থেকেও। ৩৬ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের এই লাইভ ভিডিওর কোথাও সমাবেশস্থল বা মিছিলের আশেপাশে ‘জয় বাংলা/জিতবে আবার নৌকা/শেখ হাসিনার সালাম নিন/নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ এই স্লোগানটি শুনতে পাওয়া যায়নি।
বরং মিছিল থেকে বাকশালী নির্বাচন/মানবে না রে জনগণ/ একদলীয় নির্বাচন /মানবে না রে জনগন
/ ৭ তারিখের নির্বাচন/ভোট চোর ভোট চোর/ অবৈধ নির্বাচন/ ভোট চোর ভোট চোর/প্রহসনের নির্বাচন/ভোট চোর ভোট চোর/ জ্বালো জ্বালো/ আগুন জ্বালো একসাথে/ শেখ হাসিনার গদিতে/আগুন জ্বালো একসাথে /মুজিব থেকে হাসিনা/বাকশাল মানিনা ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায়, যে স্লোগানগুলো কোনো বাদ্যযন্ত্রছাড়া খালি গলায় (কেবল মাঝে মাঝে হাততালি সহযোগে) দিতে শোনা যায়। অন্যদিকে জয়বাংলা গান শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না নুরুল হক নুর ক্যাপশনযুক্ত ভিডিওতে বাদ্যযন্ত্রসহ মূল গানটিই শোনা যাচ্ছে। মিছিলে যেভাবে গাওয়া সম্ভব না। মূল স্লোগানের ভিডিও থেকে অডিও এডিট করে জয় বাংলা/জিতবে আবার নৌকা গানটির অডিও পরবর্তীতে যোগ করা হয়েছে বলে ফ্যাক্টওয়াচের বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সার্বিক বিবেচনায়, ফ্যাক্টওয়াচ এই ভিডিওগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।