গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রকাশ্যে দেখা গেছে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ছবিটিতে ওবায়দুল কাদেরের মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে একটি হাসপাতালের সামনে কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওবায়দুল কাদেরের দাবিতে ভাইরাল ছবিটি বাস্তব নয়। এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি।
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্টওয়াচ টিম প্রথমে এটির উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। রিভার্স ইমেজ সার্চসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় খুঁজে ছবিটির উৎস নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা কে ছবিটি তুলেছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
ছবিটি বিশ্লেষণও অসঙ্গতি নজরে পড়ে ফ্যাক্টওয়াচের। যেমন, কথিত ছবিটিতে ওবায়দুল কাদেরকে কটি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ওবায়দুল কাদের মুখ লুকাতে এই কটি টেনে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন। তবে সাধারণত কটি দিয়ে এভাবে মুখ লুকোনো সম্ভব নয়। অর্থাৎ কটি মুখ ঢাকার মতো যথেষ্ট বড় বা নমনীয় হয় না।
ভাইরাল ছবিটিতে ওবায়দুল কাদেরকে একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওবায়দুল কাদেরের মাথার অবস্থানের কারণে ভবনটির পুরো নামফলক চোখে পড়ে না।
তবে আশপাশের যানবাহনসহ অন্যান্য উপাদান মিলিয়ে ধারণা করা যায়, ভবনটির নাম নর্থসিটি হাসপাতাল। এই সূত্রে গুগল ম্যাপে খুঁজে কলকাতার বাগমারী রোডে এই নামে একটি হাসপাতাল পাওয়া যায়। এই হাসপাতালের ছবির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের কথিত ছবির অবকাঠামোগত মিল রয়েছে। ছবি দুটিতে থাকা ভবনটির অংশ তুলনা করলে এতে গঠনগত অমিল চোখে পড়ে। যেমন, বাগমারী রোডে অবস্থিত নর্থ সিটি হাসপাতালের সামনের অংশে পাঁচটি জানালা রয়েছে। কিন্তু আলোচিত ছবিতে জানালা দেখা যায় চারটি।
প্রসঙ্গত, নিউজ পোর্টাল সকাল সন্ধ্যার সম্পাদক গাজী নাসিরুদ্দিন গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) তার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া এক পোস্টে তার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে লিখেন, ‘আমার এক বন্ধু কোলকাতা গেছে ডাক্তার দেখাতে। এপোলো হসপিটালের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট শ্যামাশীষ ব্যানার্জীর জন্য ওয়েট করছিল। আজ বিকেলেই। ডাক্তারের রুম বন্ধ। ডাক্তারের ফোনও বন্ধ। ডাক্তারের সহকারী বলছেন, স্যার লাঞ্চে। ঘন্টার মত অপেক্ষার পর রুমের কপাট খুলল। আকাশি রঙয়ের টি-শার্ট ও প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক বের হলেন। লোকটাকে চিনে ফেলে ও যেই না বলছে, “ওবায়দুল কাদের না!” ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক মুখে দিয়ে হন হন করে হেঁটে চলে গেলেন। আমার বন্ধু বলছে, “পুরা চকচক করতেছিলেন স্যার। চিন্তা করতে করতে ব্যাডা বাইরাইয়া গেল।’’
তার এই পোস্টে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালের নাম উল্লেখ করেছিলেন। অপরদিকে আলোচিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নর্থসিটি হাসপাতালের নাম।
উপরে উল্লিখিত এসব অসঙ্গতির কারণে ওবায়দুল কাদেরের দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি বলে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে এআই ছবি শনাক্তকারী অন্তত ৪ টি টুল দিয়ে ছবিটি বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম।
সাইট ইঞ্জিন, ইজ ইট এআই, এআই অর নট ও হাইভ মডারেশন নামের এই ৪ টি টুলই ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি বলে জানায়।
এসব বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ ছবিটিকে বিকৃত হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
Claim: গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রকাশ্যে দেখা গেছে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
Claimed By: Facebook Users
Rating: False
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh