ওবায়দুল কাদেরের গ্রেপ্তারের গুজব

22
ওবায়দুল কাদেরের গ্রেপ্তারের গুজব ওবায়দুল কাদেরের গ্রেপ্তারের গুজব

জহিরুল ইসলাম 

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে : যশোর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় আটক হলেন ওবায়দুল কাদের

যা পাওয়া যাচ্ছে : যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, এমন কোনো আটকের তথ্য তাদের হাতে নেই। এছাড়া ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেপ্তারের প্রমাণ হিসেবে যেসব ছবি বা ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো ভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ছবি, বা ভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাওয়ের দৃশ্য।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে

অনুসন্ধান

একটি বাড়ির বদ্ধ দরজার গেটের সামনে বিপুল সংখ্যক জনতা উল্লাস করছে- এমন একটা লাইভ ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, ওবায়দুল কাদের আটক। ভিডিওতে ভাষ্যকারের কথা শুনে বোঝা গেল, তারা ধারণা করছেন ,এই বাড়ির মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রয়েছেন, এবং তাকে আটক করার জন্য জনতা এই বাড়িটি ঘেরাও করেছে।

তবে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এটি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত একটি বাড়ি, এবং গত ১৩ই জুলাই রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই বাড়িতে অবস্থান করছেন এমন সন্দেহে জনতা এই বাড়িটি ঘেরাও করে।

এ সম্পর্কে একাধিক সংবাদ মাধ্যকে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন দেখুন- যমুনা টেলিভিশন, আরটিভি, দৈনিক ইত্তেফাক , দৈনিক যুগান্তর ইত্যাদি । এ সকল সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, পুরান ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবস্থান করছেন। এমন খবরে বাড়িটি ঘেরাও করেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ১২টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। এদিন আড়াইটার দিকে বাড়ির ভেতরে ঢোকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

জানা গেছে, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ডিআইটি প্লট সতীশ সরকার রোডের ৩১ নম্বর বাড়িতে আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন বলে এলাকাবাসী সন্দেহ করে। এর পর রাত সাড়ে ১২টা থেকে স্থানীয়রা বাড়িটি ঘিরে রেখে সেনাবাহিনীকে খবর দেন।

খবর পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বাড়িতে ঢুকে প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি তল্লাশি করেন। কিন্তু অনেক তল্লাশির পরও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, ভিন্ন আরেকটি ছবি দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে, যে যশোর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় ওবায়দুল কাদেরকে আটক করা হয়েছে। তবে এ সময় যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই, তিনি খোঁজ নিয়েছেন।

এছাড়া, রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, উক্ত ছবিটি প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের। ২০২১ সালে তিনি আটক হয়েছিলেন , এবং সেই সময়কার তাঁর কয়েকটি ছবি তিনি গত ১৩ই আগস্ট নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে আপলোড করেছিলেন। মুখে মাস্ক পরিহিত তার ছবিই ওবায়দুল কাদেরের বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার এবং কালের কন্ঠ।

অন্যদিকে, কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী দাবি করছেন, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।

আন্ত;বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (ISPR)এর ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশ আর্মি নামক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে ১৮ই আগস্ট তারিখে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়, গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ অনেকে সেনানিবাসে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এসময় সর্বমোট ৬২৬ জনকে আশ্রয় প্রদান করা হয়।  এদের মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেছেন, ৪ জনকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ৭ জন এখনো সেনানিবাসে রয়েছেন।

তবে এদের মধ্যে নির্দিষ্ট করে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। ফলে জনাব ওবায়দুল কাদের বর্তমানে সেনানিবাসে রয়েছেন কিনা, অথবা ৫ই আগস্টের পরে তিনি সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিনা, সেটা নিশ্চিত করা জানা সম্ভব হচ্ছে না।

সিদ্ধান্ত

যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের আটকের কোনো তথ্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায় নি, এবং যেহেতু ফেসবুকে ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নেই, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.