সম্প্রতি “আর বাঁচতে পারলো না কুলাঙ্গার ওসি প্রদীপ! ফাঁসির রায় শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো আদালতে” ক্যাপশনে একটি ভিডিও শেয়ার হয়েছে ফেসবুকে। মূলত ১৭ নভেম্বর ২০২১ (বুধবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের প্রিজনভ্যানে তোলার সময় ওসি প্রদীপ দাশকে কাঁদতে দেখা যায়। তবে সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় এখনও দেয়নি আদালত। তাই এমন ক্যাপশনে শেয়ারকৃত ভিডিওটি বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বিবেচনায়, ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ এবং ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে উক্ত ক্যাপশনে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে Jiboner Kotha নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “আর বাঁচতে পারলো না কুলাঙ্গার ওসি প্রদীপ! ফাঁসির রায় শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো আদালতে” শিরোনামে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এই ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশনে ওসি প্রদীপ দাশের ফাঁসির রায়ের কথা বলা হলেও ভিডিওর ভেতরে এমন কিছু বলা হয়নি।
একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘনিয়ে আসায় মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। ১৭ নভেম্বর ২০২১ (বুধবার) মামলার সপ্তম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এজলাস থেকে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে প্রিজনভ্যানে উঠতে দেখা গেছে প্রদীপকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরার কারণে তার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে ।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, আসামি ওসি প্রদীপ হয়তো বুঝতে পেরেছেন শিগগিরই নিজ অপরাধের শাস্তি পেতে যাচ্ছেন। সেই আশঙ্কায় তিনি কাঁদছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এই ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে যার মধ্যে পুলিশ বাদী মামলাই তিনটি। এই ঘটনার পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ১৭ নভেম্বর ২০২১ (বুধবার) এ মামলার সপ্তম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ২৯-৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইলের আদালত।
উক্ত ভিডিওগুলোতে বর্ণিত ওসি প্রদীপ দাশের কান্নার ঘটনাটি সত্য হলেও ক্যাপশনে উল্লেখিত “ফাঁসির রায়” বিষয়টি মিথ্যা। সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় এখনও দেয়নি আদালত। এমন ক্যাপশনে শেয়ারকৃত ভিডিওটি বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বিবেচনায়, ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?