বাংলাদেশ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ডামাডোলে দেশের ২৯টি জেলায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে। এসব ঘটনার অনেক ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কমপক্ষে ২ টি ঘটনার ক্ষেত্রে, ফ্যাক্টওয়াচ দেখতে পাচ্ছে যে সেখানে আদৌ এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি, এবং হামলার দাবিতে ব্যবহৃত ছবিগুলো প্রকৃতপক্ষে পুরনো অন্য কোনো ঘটনার ছবি।
এই দু’টি দাবি পর্যালোচনা করা যাক।
১ । চট্টগ্রামে মন্দিরে হামলা হয়েছে- এমন দাবিতে বেশ কয়েকটা পোস্ট আজ ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
এসব পোস্টে নির্দিষ্ট কোনো স্থানের নাম উল্লেখ না করে কেবলমাত্র দাবি করা হয়েছে যে, চট্টগ্রামে মন্দির ভাংচুর করেছে’।
তবে এই দুই উৎসে কোথাও মূল ঘটনার স্থান বা সময় উল্লেখ করা হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত প্রমাণিত হচ্ছে যে, ২০২১ সাল বা তাঁর পূর্ব থেকেই এই ছবিটি অনলাইনে রয়েছে, এবং এটা মোটেও ৫ই আগস্ট ২০২৪ এর ছবি নয়।
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ২৯ জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফেনী শহরের দুর্গামন্দিরে হামলা; দিনাজপুরের পার্বতীপুর কালীমন্দিরসহ পাঁচটি মন্দিরে ভাঙচুর; ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের ২ নম্বর ইউনিয়নের শ্মশান মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং নেত্রকোনা সদরে রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এই প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের কোনো মন্দিরে হামলার ঘটনা জানানো হয় নি। এছাড়া অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও সম্প্রতি চট্টগ্রামের কোনো মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা খুজে পাওয়া যায়নি।
এই পোস্টে মোট ৪ টি ছবি আছে। প্রত্যেকটা ছবিই অনলাইনে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এবং এদের কোনোটাই সাম্প্রতিক ছবি নয়।
প্রথম ছবিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ২০১৬ সালে হিন্দু মন্দিরের উপর হামলার সময়কার ছবি।
দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৪ সালে পাকিস্তানের হিন্দু মন্দিরে আক্রমণের ছবি।
তৃতীয় ছবিটি ২০২২ সালে জয়পুর হাট কাথলিক ধর্মপল্লীর অধীনস্থ হাটশিখা গ্রামের গির্জায় হামলার ছবি।
চতুর্থ ছবিটি ২০২১ সালে মায়ানমারে একটি খৃষ্টান গীর্জায় হামলার ছবি।
বাংলাদেশ ক্যাথলিক মিডিয়া নামক একটি ফেসবুক পেজে ইতিমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে যে এই ছবিগুলো পুরনো। এছাড়া বিরিশিরির উক্ত গীর্জায় সম্প্রতি কোনো হামলা হয়েছে- এমন কোনো তথ্য মূলধারার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়ানি।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ চট্টগ্রামের মন্দির এবং ময়মনসিংহের গীর্জায় হামলার এই দুটি দাবি সম্পর্কিত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।