জুম্মার নামাজ চলাকালীন সময়ে মসজিদের বাইরে অবস্থানরত সাধারন জনতার উপরে জনৈক ব্যক্তি লাঠিপেটা করছেন -এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাপশনে ইঙ্গিত করা হয়েছে, বাংলাদেশে শরীয়া আইন চলছে, এবং নামাজ না পড়ার অপরাধে এদেরকে মারধর করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালের কোভিড লকডাউন চলাকালীন সময়কার ভিডিও। এখানে টাঙ্গাইলের তৎকালীন এক ওয়ার্ড কমিশনার লকডাউন কার্যকর করার জন্য জনতার উপর লাঠিপেটা করছিলেন।
গুজবের উৎস
ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে ,এখানে। এই পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “জুম্মার নামাজের সময় রাস্তায় কোনো ঘুরাঘুরি করা চলবে না- শরিয়া আইন চলছে!!! তালেবানি রাষ্ট্র বঙ্গ দেশ আজ।”
অনুসন্ধান
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এই ভিডিওটি ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল অনলাইনে প্রথম দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী কয়েকদিনে অনেকে ভিডিওটি পুনরায় নিজেদের প্রোফাইলে বা পেজ থেকে প্রকাশ করেছিলেন। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে।
এসকল ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যাচ্ছে, টাঙ্গাইলের ওয়ার্ড কমিশনার এখানে লকডাউন কার্যকর করার জন্য বাইরে অবস্থানরত লোকজনদের উপরে বলপ্রয়োগ করছেন।
টাঙ্গাইলভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজটাঙ্গাইল ডটকমে গত ৯ এপ্রিল ২০২০ এ ক্ষমা চাইলেন টাঙ্গাইলে রাস্তাঘাটে লোকজনকে পেটানো সেই কমিশনার শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংবাদে বলা হয়, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং লকডাউন কার্যকর করতে মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) সাধারণ মানুষকে লাঠি দিয়ে পিটানোর পর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন।
ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি। এতে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে আমরা সচেতন না হলে এই করোনাভাইরাস থেকে আমরা রক্ষা পাবো না। তাই গতকাল অতি আবেগের বসে সাধারণ মানুষকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ছিলাম এই জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাইছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।
মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানুষের আনাগোনা তেমন একটা চোখে না পড়লেও শহরের নিরালার মোড়ে নিউমার্কেটে ওষুধের দোকানে মানুষ ভিড় করছিলেন ওষুধ কেনার জন্য। কিন্তু তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিলেন না। বেশির ভাগই ওষুধের বিক্রয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় লোকজন।
হঠাৎ এ সময় লাঠি হাতে হাজির হন পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন, টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল, টাঙ্গাইল চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি খান আহমেদ শুভ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ।
সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অজুহাত দেখিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষকে। এরপর সেখান থেকে চলে যান পার্ক বাজার রোডে। সেখানেও কয়েকটি ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা কয়েকজনকে পেটানো হয়। এরপর নিরালার মোড় দিয়ে সাধারণ মানুষকে পেটাতে পেটাতে তারা চলে যান শহরের শান্তিকুঞ্জ মোড়ে। সেখানেও পেটানো হয় কয়েকজনকে।”
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচ্য ভিডিওটি কোনোভাবেই ২০২৫ সালের নয়, বরং ২০২০ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার। সঙ্গত কারণে, সামাজিক মাধ্যমে ভুল দাবিতে ভাইরাল হওয়া আলোচ্য ভিডিওযুক্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
No Factcheck schema data available.
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh