ছবিগুলো আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনের নয়

20
ছবিগুলো আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনের নয় ছবিগুলো আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনের নয়

Published on: [post_published]

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একাধিক ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। আগামী ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর জন্য পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কিত দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে  ছবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। দাবিগুলো হচ্ছেঃ ‘চট্টগ্রামের নতুনব্রীজ থেকে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের দিকে রওনা দিয়েছে’ এবং ‘২০২৩ সালের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অন্যায় ভাবে পেটানো হয়েছে’। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় এই ছবিগুলোর সাথে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে কিছু ছবি ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়কার এবং একটি ছবি ২০১৪ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়কার। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

 




ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

গত ৭ এবং ৮  আগস্ট ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করেছিল। একই দাবিতে মঙ্গলবারও বিক্ষোভ করছে তারা। 

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে বেশ কিছু ছবি  প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি দাবি হচ্ছে ‘২০২৩ সালের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে পেটানো হয়েছে‘। এই দাবির সাথে আহত এক ছাত্রের ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য জানার জন্য ছবিটি  ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট Getty Images এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট প্রকাশিত ভাইরাল এই ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ছবিটির বর্ণনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটা ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সরকারপন্থী কর্মীদের ছোঁড়া পাথরে আহত একজন ছাত্রকে অন্য ছাত্রদের সাহায্য করার ছবি। এই ছবির সাথে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর সাম্প্রতিক আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

Embed from Getty Images

অন্য আরেকটি দাবি হচ্ছে চট্টগ্রামের নতুনব্রীজ থেকে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের দিকে রওনা দিয়েছে’। এই দাবিটির সাথে একাধিক ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ছবিগুলোর সাথে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর জন্য পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চট্টগ্রামে সহিংস বিক্ষোভের কোনো ঘটনার কথা মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া যায়নি। গণসমাবেশের নামে ভাইরাল ছবিগুলো সম্পর্কে ফ্যাক্টওয়াচের গবেষণা থেকে নিম্নোক্ত তথ্য জানা গেছে:

ছবি ১: 

ঢাকা ট্রিবিউনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ভাইরাল এই  ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধটি ছিল ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সম্পর্কিত।  

 

ছবি ২: 

এই ছবিতে ঢাকা সিটি কলেজের সাইনবোর্ড খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তিতে বিবিসির ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল এই  ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ছিল ২০১৮ সালে ঢাকায় সংঘটিত নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে।

 

ছবি ৩: 

The Independent এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল এই ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করার একটি ছবি। 

 

ছবি ৪:

চ্যানেল আই এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৯ জুলাই “শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কি ব্যর্থ হয়ে যাবে?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ছবির সাথে ফেসবুকে ভাইরাল এই ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

 

ছবি ৫: 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Firstpost এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল এই ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ছিল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আন্দোলনের ওপর লেখা প্রতিবেদন। ছবিটিও ঐ আন্দোলনের।

অর্থাৎ ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর কোনোটিই চলমান আন্দোলনের নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.