সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারির সত্যমিথ্যা
Published on: [post_published]
সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কারফিউ এবং গণগ্রেফতারের প্রেক্ষিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকের মধ্যে চাপা আতংক দেখা দিচ্ছে। অনেকে দাবি করছেন, ফেসবুকে কার্যক্রম নজরদারির মাধ্যমে গোয়েন্দা পুলিশ এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনে সক্রিয়দের গ্রেফতার করছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই অনলাইনে সতর্ক থাকার নানা উপায় বর্ণনা করছেন। তবে এর সাথে অনেক গুজব এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যও ছড়িয়ে পড়ছে। এমন কয়েকটি ভাইরাল দাবি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
১. ফেসবুকের নতুন নিয়ন অনুসারে, ব্যবহারকারীর ছবি ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবে কি ?
দাবি : নতুন ফেসবুক/মেটা নিয়ম শুরু হবে যেখানে তারা আপনার ছবি ব্যবহার করতে পারবে। ভুলে যাবেন না, আজ শেষ দিন! তাই একটা কাজ করে রাখুন। এটি আপনার বিরুদ্ধে মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে; আপনি যা কিছু পোস্ট করেছেন – এমনকি মেসেজ যা মুছে ফেলা হয়েছে। এতে কোন খরচ নেই, শুধু কপি করে পোস্ট করুন,পরে আফসোস করার চেয়ে ভালো হবে।ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮… আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি…আমি ফেসবুক/মেটা বা অন্য কোন ফেসবুক/মেটা সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আমার ছবি, তথ্য, বার্তা বা বার্তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না, অতীতে এবং ভবিষ্যতে কোন সময়েই।
এই পোস্টটি কপি করে আপনার নিজের পেজে পোস্ট করে রাখুন এবং ঘোষণা দিন যে, আপনি ফেসবুক/মেটা-কে তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা আমার তথ্য অন্য কোথাও শেয়ার করার অনুমতি দিচ্ছি না। ছবি, বর্তমান বা অতীত, বন্ধু-বান্ধব, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস, ব্যক্তিগত কোন তথ্য বা পোস্ট এ সবের কোন কিছুই আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া ভিন্নরূপে ব্যবহার করা যাবে না।
The new Facebook / Meta rules will start where they can use your pictures. Do not forget, today is the last day! So keep up the good work. It can be used in lawsuits against you; Everything you’ve posted – even messages that have been deleted. There is no cost, just copy and post, it will be better than regretting later.
1-207, 1-306 under UCC Act … I am imposing protection of my rights …
I do not allow Facebook / Meta or any other Facebook / Meta related person to use my pictures, information, messages or messages, in the past and at any time in the future.
Copy this post and post it on your news page and declare that you are not allowing Facebook / Meta to share my information posted on their website anywhere else. Nothing in the picture, present or past, friend, phone number, email address, any personal information or post may be used differently without my written permission.
একমত পোষণ করছি এবং আমার ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য আমার অনুমতি ছাড়া অন্যকে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ আমার ছবি, তথ্য বা ফেইসবুকে প্রদত্ত পোস্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমন দাবিযুক্ত কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে।
খন্ডন : ফেসবুকের ‘টার্মস এ্যান্ড পলিসি’ সেকশন থেকে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক একাউন্ট খোলার সময়েই শর্তাবলীতে ছবি এবং আরো কিছু তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দিতে হয়। উদাহরণস্বরুপ- কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করলে ,ফেসবুক সেই ছবিটা সংরক্ষণ ,প্রতিলিপি তৈরি করা বা অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে ভাগাভাগি (শেয়ার) করতে পারবে, এবং এই অনুমতিটা ফেসবুকের শর্তাবলীতেই রয়েছে। তবে এসকল ছবির ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মূল আপলোডকারীরই থাকবে।
এছাড়া, একই পাতায় বলা হয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো বিজ্ঞাপনদাতার কাছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর নাম, ইমেইল আইডি, ফোন নম্বর বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে না। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীর কিছু কিছু তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
যেহেতু এইসকল শর্তাবলী একজন ব্যবহারকারী ফেসবুক একাউন্ট খোলার সময়েই মেনে নিয়েছে, তাই নতুন করে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছবি ব্যবহারে নতুন শর্ত দেওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়া, ফেসবুক কোনো নতুন নিয়মও সম্প্রতি শুরু করেনি।
এই পোস্টে যে ইউসিসি ১-২০৭, ১-৩০৮ এর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত ইউনিয়ন কমার্শিয়াল ল এর বিভিন্ন ধারা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, ২০১২ থেকে প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গুজবটা দেখা গিয়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম অতীতে এই গুজব খন্ড করেছে। এমন কয়েকটি খন্ডন দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে এখানে।
আমেরিকাভিত্তিক ফতাক্টচেকিং সংস্থা স্নোপস এর এই বিষয়ক একটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে।
২. হোয়াটসঅ্যাপে দুইয়ের অধিক টিক দেখানো মানে কি নজরদারি চলছে?
দাবি :
WhatsApp এ
1 | ✔= বার্তা পাঠানো হয়েছে
2 | ✔✔= বার্তা পৌঁছেছে
3 | দুটি নীল ✔✔= বার্তা পড়ুন
4 | তিনটি নীল ✔✔✔= সরকার বার্তা নোট করেছে
5 | দুটি নীল এবং একটি লাল ✔✔✔= সরকার আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে
6 | একটি নীল এবং দুটি লাল = সরকার আপনার তথ্য পরীক্ষা করছে
7 | তিনটি লাল ✔✔✔= সরকার আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে এবং শীঘ্রই আপনি আদালতের সমন পাবেন।
এমন দাবিযুক্ত কয়েকটি সাম্প্রতিক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ,এখানে।
অতীতেও এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেমন দেখুন এখানে।
খন্ডন: ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ৩১ জুলাই, ২০২৩ সালে করা একটি খবর থেকে জানা যাচ্ছে হোয়াটসআ্যাপে দুইয়ের অধিক টিক দেখানো হচ্ছে এমন গুজব সর্বপ্রথম শুরু হয় ভারতে। ২০২২ এর অগাস্টে এবং ২০২৩ এর জুলাই মাসে এই গুজব ভারতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উভয়সময়ই এই গুজব ছড়ানো কালীন ভারতের ফ্যাক্ট চেকার PIB (Press Information Bureau) এই গুজব খন্ডন করেছিলো এবং বলা হয়েছিলো সরকার এমন কিছুর সাথে জড়িত ছিলেন না অর্থাৎ এই তথ্য পুরোপুরি মিথ্যা। মূলত সেই গুজবেরই বাংলা অনুবাদ এখন ছড়িয়ে পড়ছে এদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
২৮ মে, ২০২১ সালে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম বিজনেস টুডের খবরে বলা হচ্ছে হোয়াটসআ্যাপে দুইয়ের অধিক টিক থাকার কোনো সিস্টেমই নেই। হোয়াটসঅ্যাপে চার ধরনের সিস্টেম দেখা যায় যেগুলো হচ্ছে-
“ক্লক/ঘড়ি চিহ্ন” যার অর্থ বোঝায় মেসেজ সেন্ড হয়নি, হতে পারে সেটা নেটওয়ার্ক প্রবলেম বা অন্য কোনো সমস্যার জন্য।
“এক টিক” যার অর্থ মেসেজ পাঠানো হয়েছে কিন্তু ডেলিভারি হয়নি, অর্থাৎ অপরপক্ষ নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত নন।
“ধূসর রংয়ের দুই টিক”-এর অর্থ মেসেজ ডেলিভার হয়েছে অর্থাৎ অপরপক্ষের ব্যক্তি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন কিন্তু মেসেজ দেখেননি।
তারপর আসে “নীল রংয়ের দুই টিক” যার অর্থ অপরপক্ষের ব্যক্তি মেসেজটি পড়েছেন। তবে মেসেজ পড়ার পরও নীল রং নাও আসতে পারে, ধূসর রংই থাকতে পারে যদি দুজনের একজনেরও রিড রিসিপ্ট অপশন অফ থাকে। সেক্ষেত্রে মেসেজ দেখলেও তা বোঝার উপায় থাকে না। হোয়াটসআ্যাপে কখনোই লাল রংয়ের টিক বা দুইয়ের অধিক টিক ছিলো না, এমন সিস্টেম প্রোগ্রামিং করে এই আ্যাপলিকেশনে আনাই হয়নি।
দুইয়ের অধিক টিকই যেখানে থাকতে পারেনা সেখানে অধিক লাল নীল টিক থাকা মানে হোয়াটসআ্যাপের মেসেজে সরকার আড়ি পাতছে এই কথার কোনো ভিত্তিই নেই। তাছাড়া আমরা ২ নং পয়েন্টে এটা দেখিয়েছি যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রাইভেট মেসেজিং প্লাটফর্ম গুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
৩. আগামীকাল থেকে (বা খুব শিঘ্রই) বাংলাদেশে হোয়াটস এ্যাপ এবং ভয়েস কলের নতুন নিয়ম কার্যকর হবে?
দাবি : আগামীকাল থেকে বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন কলের নতুন যোগাযোগের নিয়ম কার্যকর করা হবে:-
(১) সব কল রেকর্ডিং হবে।
(২)সমস্ত কল রেকর্ডিং সংরক্ষণ করা হবে।
(৩) হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারসহ সব সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি করা হবে।
(৪)যারা জানেন না সবাইকে জানিয়ে দিন।
(৫) আপনার ডিভাইসগুলি মন্ত্রণালয় সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হবে।
(৬) কারো কাছে যেন ভুল বার্তা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
এমন দাবিযুক্ত কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে।
এই একই দাবিযুক্ত পোস্ট অতীতেও ছড়িয়ে পড়েছিল ( যেমন দেখুন এখানে) । তখন,কিংবা এখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াটস এ্যাপ এবং ফোন কলের নতুন নিয়ম বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
এই পোস্টের কয়েকটি দাবি নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা যাক।
৩.১ বাংলাদেশে কি ফোন কল রেকর্ড করা হয়?
উত্তর: ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে “ফোন আলাপ রেকর্ড করা নিয়ে বাংলাদেশের আইন কী বলে?” শিরোনামে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন পাস হয়, পরবর্তীতে ২০১০ সালে সেই আইনটি সংশোধন করা হয়। এ আইনে ফোনে আড়ি পাতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে।
তবে সরকারি সংস্থাগুলো তদন্তের স্বার্থে বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কোন নাগরিকের ফোনে আড়ি পাততে পারে কিনা এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান জানান রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিধিমালা অনুসরণ করেই অনেক সময় ব্যক্তির ফোন কল রেকর্ড করে থাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি আরো জানান “টেলিফোনে আড়িপাতা সংক্রান্ত আইনে ২০১৪ সালে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ঐ পরিবর্তনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে কারো ফোনে আড়িপাতা বা কথোপকথনের রেকর্ড আইনিভাবে সংগ্রহ করার সুযোগ তৈরি হয়।”
তবে আইনজীবীদের কেউ কেউ মনে করেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জন শৃঙ্খলা এসব বিষয়ে যে কোন কর্মকর্তাকে সরকারের অনুমতি নিতে হলেও যেহেতু আইনে এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা নেই, সে কারণে অনেক সময়ই বিষয়গুলো নিয়ে কড়াকড়ি তেমন থাকেনা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, মাংস ব্যবসায়ী খলিল সহ অনেকের ফোনালাপই অতীতে ফাঁস হয়েছিল, এবং এসব কল রেকর্ড সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছিল। অতি সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি’র প্রধান নেতৃবৃন্দের বহির্বিশ্বের সাথে ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন । এসব থেকে ধারণা করা যায় যে সরকার নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন কল রেকর্ড এবং সংরক্ষণ করে থাকে।
নিয়মিত ফোন কল রেকর্ডের বাইরে, ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ (skype) নামক এ্যাপ এর মাধ্যমে কথোপকথনের একটি রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়। এখান থেকে ধারণা করা যায় যে, বাংলাদেশে সরকারের বাইরে অন্যান্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীও বিভিন্নজনের ডিজিটাল কথোপকথনে আড়িপাতার চেষ্টা করছে এবং তারা সময়ে সময়ে কল রেকর্ড ফাঁসও করতে পারে ।
৩.২ হোয়াটঅ্যাপ, ফেসবুক, এক্সের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সরকার বা অন্য কেউ নজরদারি করতে পারে?
উত্তর: ২৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ “হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে কি নজরদারি করা যায়” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারছি হোয়াটসঅ্যাপ হেল্প সেন্টারে বলা আছে,হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড পদ্ধতিতে ডাটা আদানপ্রদান হয়। এই পদ্ধতি অনুসারে ডাটা আদানপ্রদান করলে প্রাপক ও প্রেরক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সেই ডাটা পাওয়া সম্ভব না। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষও তা দেখতে পাবে না।
তবে কোনো দেশের সরকারি সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপের কাছে ডাটা চেয়ে আবেদন করতে পারে। তবে সেসকল আবেদনের আইনি বৈধতা থাকা বাধ্যতামূলক। আবেদন করলেই যে তথ্য দেওয়া হবে এমনটা না, কতৃপক্ষ থেকে সেসব আবেদন যাচাই-বাছাইও করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপ নিজেদের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার ‘গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট ফর ইউজার ডেটা রিপোর্ট’- এ বছরে দুইবার এসব আবেদনের তথ্য প্রকাশ করে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দিষ্ট তথ্য সরকারকে দেয়। এসকল তথ্যের মধ্যে থাকতে পারে ব্যবহারকারীর নাম, ব্যবহারকারীর অ্যাবাউট সেকশনে দেওয়া তথ্য, প্রোফাইল, কোনো গ্রুপে থাকলে তার বর্ণনা, কনট্যাক্ট নম্বরের বর্ণনা, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলার তারিখ, সর্বশেষ হোয়াটসঅ্যাপে এক্টিভ থাকার সময়, আইপি অ্যাড্রেস, ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ধরন, এবং ই-মেইল।
ফেসবুক মেসেঞ্জারে পূর্বে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সিস্টেম না থাকলেও ২০২৩ এর শেষে তা চালু করা হয়। ফলে হোয়াটসআ্যাপের মতো ফেসবুকের মেসেজগুলোতেও এখন সরাসরি নজরদারি করা সম্ভব নয়। তবে হোয়াটসআ্যাপের মতোই সরকার প্রয়োজনের তাগিদে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের থেকে তথ্য চেয়ে অনুরোধ করতে পারে। যেমনটা ২০২০ সালে করা হয়েছিলো। তখন বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক কতৃপক্ষের কাছে ১৪২টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুরোধ এবং ৯৯টি জরুরি অনুরোধ, মোট ২৪১টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩৭১টি ফেসবুক একাউন্টের তথ্য চেয়েছিলো। ফেসবুক এই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিলো ঠিকই, তবে ২৪১টি অনুরোধই রেখেছে এমনটা নয়। ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ফেসবুক কতৃপক্ষ এই অনুরোধে সাড়া দেয়, অর্থাৎ প্রায় ১০৬টি অনুরোধে সাড়া দেয়া হয়েছিলো তখন, বাকি ক্ষেত্রে তথ্য দেয়া হয়নি।
এক্স (সাবেক টুইটারে) হেল্প সেন্টারের ওয়েবপেজ থেকে জানা যাচ্ছে তাদের ডাইরেক্ট মেসেজেও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তাই এক্সের মেসেজও সরকার বা অন্য কোন পক্ষ দেখতে পারবে না। তাই তাদের মেসেজগুলোও সুরক্ষিত। তবে এক্সে কল করার কোন ফিচার নেই।
এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন কি? এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন হচ্ছে সুরক্ষিত মেসেজ আদান প্রদানের একটা সুরক্ষা পদ্ধতি। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রেরক এবং প্রাপক দুইটি কি (key), অথবা পিন ব্যবহার করে- একটি পাবলিক কি, অন্যটি প্রাইভেট কি। এই পদ্ধতিতে প্রেরকের পাঠানো ডাটা পাবলিক কি এর মাধ্যমে একটি এনক্রিপটেড টেক্সট ফরম্যাটে রুপান্তর হয়। এই ডাটা অন্য প্রান্তে প্রাপকের কাছে প্রেরণ করলে তা প্রাইভেট কি ব্যবহার করে ডিক্রিপ্ট (সেই আসল ডাটা যা মানুষ বুঝতে পারে) ফরম্যাটে পরিণত হয়। ইউজাররা ডিক্রিপ্টেড ফরম্যাটেই ডাটা দেখতে পাবে। অন্য সবাই (হোয়াটস এ্যাপ কর্তৃপক্ষ সহ) কেবলমাত্র পাবলিক কি ই দেখতে পাবে।
তাই বলা যায়, এসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বা তৃতীয় মাধ্যম সরাসরি নজরদারি করা করতে পারে না। তারা এসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করা ব্যক্তিগত তথ্য কেউ দেখতে পারে না। তবে সরকার ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করতে পারবে। তখন ফেসবুক তা যাচাই, বাছাই করে তথ্য দেয়া যুক্তিযুক্ত মনে হলে তা দিয়ে থাকে।
৩.৩ আমাদের ডিভাইসগুলো কি মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত হবে?
উত্তর: সরকারের মন্ত্রণালয়ের সাথে সরাসরি ফোন যুক্ত থাকে এমন কোন খবর কখনো শোনা যায়নি। তবে অনেক দেশের সরকারের বিরুদ্ধে স্পাইওয়্যার (গুপ্তচর) সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।
২০জুলাই, ২০২১ সালে বিবিসির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েল থেকে পেগাসস নামে একটি স্পাইওয়্যার কিনেছে এমন একটি অভিযোগ ওঠে। পেগাসস নিয়ে ২০১৮ সালে সিটিজেনস ল্যাবের একটি অনুসন্ধানীতে বাংলাদেশের নাম ওঠে আসে। সেসময় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডেইলি স্টারকে বলেন “টেলিযোগাযোগ বিভাগ বা তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এই ধরণের কোনো স্পাইওয়্যার কেনেনি। কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না… বাংলাদেশের মানহানির চেষ্টা হচ্ছে।” তবে স্পাইওয়্যার কেনার বিরুদ্ধে সরকার আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করেনি।
সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল, যিনি অনেকদিন ধরে বাংলাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি পর্যবেক্ষণ করেন, তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, তার জানা মতে পেগাসাসের ব্যবহার নিয়ে সর্ব-সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশে এটির সরাসরি ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আল জাজিরা তাদের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বাংলাদেশ গোপনে ইসরায়েলি প্রযুক্তি কিনেছে এমন একটি খবর প্রকাশ করে। আল জাজিরার এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলে, বাংলাদেশ পিকসিক্স নামের একটি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ইমসি ক্যাচার একটি নজরদারি যন্ত্র কেনে যা দিয়ে ওয়াই-ফাই, সেলুলার এবং ভিডিও নজরদারি করা হয়। তবে বাংলাদেশ সরকার তা অস্বীকার করে।
ইমসি ক্যাচার: ইমসি ক্যাচার ম্যান ইন দ্য মিডল অ্যাটাক (man-in-the-middle (mitm) attack) পদ্ধতিতে কাজ করে। ইমসি ক্যাচার বেস স্টেশন এবং টার্গেট ফোনের মাঝখানে একটি ফেক টাওয়ার তৈরি করে তথ্য হাতিয়ে নেয়। ইমসি ক্যাচার আইনিভাবে কিছু দেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে। ইমসি ক্যাচার ব্যবহার করে লোকেশন ট্র্যাক করা, মেটাডাটা সংগ্রহ, কল, টেক্সট সংগ্রহ করা হয়। তবে ইমসি ক্যাচার জিএসএম (গ্লোবাল কমুনিকেশন ফর মোবাইল কমুনিকেশন) ভিত্তিক নেটওয়ার্কে বেশি কার্যকারী। জিএসএম পদ্ধতি টু জি (দ্বিতীয় জেনারেশন) নেটওয়ার্কে ব্যবহার হয়। কারণ টু জি নেটওয়ার্কের সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভঙ্গুর এর উপরের জেনারেশন গুলো থেকে। তবে বর্তমান ডিভাইসগুলো বেশিরভাগ ফোর জি অথবা ফাইভ জি নেটওয়ার্কে চলে যা অনেক বেশি সুরক্ষিত। তাই বর্তমান ডিভাইসগুলো ইমসি ক্যাচার থেকে অনেকটাই নিরাপদ।
প্যাগাসস: প্যাগাসস ইসরায়েলের এনএসও কোম্পানির তৈরি করা একটি শক্তিশালি স্পাইওয়্যার বা স্পাই সফটওয়্যার। প্যাগাসস ব্যবহারকারির অজান্তে তার ডাটা চুরি করে। বেশিরভাগ স্পাইওয়্যার টার্গেট ডিভাইসের ব্যবহারকারির ক্লিকের মাধ্যমে সচল হয়। কিন্তু প্যাগাসস কোন ক্লিক ছাড়াই সচল হতে পারে। একে জিরো ক্লিক সিস্টেমও বলে। প্যাগাসস টার্গেট ডিভাইসে ঢুকে মেসেজ, কল, কন্টাক্ট, ছবি, ভিডিও, লোকেশন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি না জানিয়েই পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এটা ডিভাইসের কোন কার্যপ্রণালি সচল বা বন্ধ করার ক্ষমতাও পায়, যেমন ওয়াইফাই, ব্লুটুথ।
তবে প্যাগাসস প্রচুর ব্যয়বহুল একটি স্পাইওয়্যার। ২০১৬ সালে গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্ট অনুসারে ৫০ টি স্মার্টফোন গুপ্তচরবৃত্তি করতে খরচ পড়বে ২০.৭ মিলিয়ন ইউরো এবং ১০০টি স্মার্টফোনের জন্য খরচ পড়বে ৪১.৪ মিলিয়ন ইউরো। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে প্যাগাসস স্পাইওয়্যার দেশের সব মানুষের স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যাবে না। এটা খুবই অল্প কিছু মানুষের উপর ব্যবহার করা যাবে। এনএসও গ্রুপের তথ্যমতে সারা বিশ্বে প্যাগাসস ৫০০০০ স্মার্টফোনের উপর প্রয়োগ করা যাবে।
৪. ভিপিএন ব্যতীত ফেসবুক ব্যবহার করলে সরকার কি অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে পারে?
দাবি : ভিপিএন ছাড়া ফেসবুক চালানো যাচ্ছে কিন্তু ভুলেও ভিপিএন ছাড়া চালাবেন না। আপনার আমার লোকেশন ট্রেক করার জন্য এটা করতেসে
এমন দাবিযুক্ত কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে।
ব্যাখ্যা : পূর্বেই (অনুচ্ছেদ ৩.২) এ আপনারা জেনেছেন যে, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ফেসবুক (মেটা) কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে সরকারকে তথ্য সরবরাহ করছে। ২০১৬ সাল থেকে এই তথ্য ভাগাভাগি শুরু হয়েছিল, যখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ফেসবুকের কাছ থেকে ৩ টি ফেসবুক আইডি সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্তির কথা জানিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে মেটা কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ সরকার ১,৪৫৪ টি একাউন্ট সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করেছিল মেটা।
২০১৯ সালে প্রকাশিত বিবিসি বাংলা’র এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাবস্ক্রাইবার তথ্য অর্থাৎ অভিযুক্তের পরিচয় বা অবস্থান সনাক্ত করা যায় এমন তথ্যগুলো দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। —– আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কারো ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের আইডি ট্র্যাকিং বা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফেসবুকের ল’ এনফোর্সমেন্ট অনলাইন রিকোয়েস্টের মাধ্যমে তাদের অনুরোধ জমা দিতে পারে।
বাংলাদেশের বাইরে, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশেও সরকারকে মেটার পক্ষ থেকে এভাবে তথ্য সরবরাহের নজির রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান এর এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আমেরিকা সরোকার মেটার কাছ থেকে কোনো কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রাথমিক তথ্য, আইপি ঠিকানা ইত্যাদি জানতে চায়।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে ,বাংলাদেশ সরকার চাইলে কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারীর অবস্থান (আইপি এ্যাড্ড্রেস) বের করতে পারবে। তবে এটা সরাসরি বাংলাদেশ সরকার পারবে না, বরং মেটার কাছে অনুরোধের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো পাবে। যদিও বাংলাদেশ সরকার চলমান আন্দোলনে এভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে অবস্থান সনাক্ত করে কাউকে গ্রেফতার করছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করেনি। তবে এসব পোস্টে যে আশংকার কথা বলা হয়েছে, তাঁর যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছে। এবং সেক্ষেত্রে, ভিপিএন ব্যবহার করে সম্ভাব্য নজরদারি এড়ানো যেতে পারে।
উল্লেখ্য, VPN এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Virtual Private Network , যা কোনো অনলাইন ব্যবহারকারীর মূল আইপি ঠিকানা বদলে ভিন্ন কোনো দেশের আইপি ঠিকানায় পরিবর্তন করে দেয়। ভিপিএন ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে, সরকার বা কোনো নজরদারি সংস্থা সরাসরি ব্যবহারকারীর আইপি এ্যাড্ড্রেস পাবেনা, তবে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কে উক্ত ব্যবহারকারীর অবস্থান সম্পর্কে কিছু সূত্র দিতে অনুরোধ করতে পারে।
৫. কল ফরওয়ার্ড নিয়ে বিভ্রান্তি
দাবি : কোটা সংস্কার আন্দোলন এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপ থেকে দেখা যাচ্ছে, গ্রুপ মেম্বরদের তাদের মোবাইলের সম্ভাব্য কল ফরওয়ার্ডিং অফ করতে উপদেশ দিচ্ছে, এবং জানাচ্ছে, এটা না করলে মোবাইল ট্র্যাক করা হতে পারে।
এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
ব্যাখ্যা : মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে, কল ফরওয়ার্ডিং সার্ভিসের মাধ্যমে একটি সিমকার্ডের যাবতীয় বা নির্দিষ্ট কল অন্য কোনো সিম কার্ডে ট্রান্সফার করা যায়। উদাহরণস্বরুপ- ধরি, রহিম সাহেবের জিপি এবং টেলিটক দুইটি সিমকার্ড রয়েছে । একটি তিনি অফিসের কাজে ব্যবহার করেন আরেকটি ব্যক্তিগত কাজে ।একদিন তিনি দুর্গম পাহাড়ি এক এলাকায় ভ্রমণে গেলেন, যে এলাকায় জিপি সিম এর নেটওয়ার্ক ভাল কাজ করে না,কিন্তু টেলিটক সিম ভাল কাজ করে। বুদ্ধি করে তিনি উক্ত এলাকায় প্রবেশের পূর্বেই তাঁর জিপি সিম থেকে সকল ইনকামিং কল ফরওয়ার্ড করে দিলেন টেলিটক নাম্বারে। এর ফলে ,নেটওয়ার্ক কভারেজবিহীন এলাকাতেও তাঁর জিপি সিমে কোনো ইনকামিং কল আসলে সেটা টেলিটকে ফরওয়ার্ড হয়ে যাবে, অর্থাৎ তাঁর কাছে পৌছাবে।
এই কল ফরওয়ার্ডিং সংক্রান্ত চেকিং এর জন্য *#62# হল একটি আন্তর্জাতিক কোড, যা কমবেশি সকল মুঠোফোন অপারেটরই ব্যবহার করে। এই এম এম আই কোড ডায়ালের মাধ্যমে কোনো কল ফরওয়ার্ডিং চালু আছে কিনা সেটা চেক করা যায়।
কোনো ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতে মোবাইলটা কিছুক্ষণের জন্য অন্য কেউ হাতে নিয়ে কল ফরওয়ার্ডিং চালু করে দিতে পারে। সাধারণত একটি কোডের মাধ্যমেই এটা করা যায় ( যেমন জিপির ক্ষেত্রে ,**১৩ ডিজিটের ফোন নাম্বার# ডায়াল করলে কল ফরোয়ার্ড হয়ে যায়। )
এভাবে ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতে কেউ কল ফরোয়ার্ড চালু করে দিলে, তাঁর প্রয়োজনীয় সব কল অন্য কোনো নাম্বারে চলে যাবে, এবং সেই নাম্বার থেকে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে এই ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা হতে পারে। তবে ‘মোবাইল ট্র্যাক’ বলতে যা বুঝায়, অর্থাৎ কোনো ফোনের সঠিক অবস্থান বা আইপি এ্যাড্ড্রেস বের করাটা এভাবে কল ফরওয়ার্ডিং দিয়ে সম্ভব নয়।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
|
No Factcheck schema data available.